যোহরের নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব এবং সময় ও উপকারিতা জানুন
যোহরের নামাজের ফজিলত ও যোহর নামাজের গুরুত্বসহ এই নামাজ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানতে আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়ুন।
![]() |
যোহরের নামাজের ফজিলত |
যোহরের নামাজের ফজিলত জানার পাশাপাশি নামাজের গুরুত্ব,নামাজের
সময়,নামাজের রাকাত সংখ্যা ও যোহর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে হাদিস জানতে
পারবেন আর্টিকেলটিতে।
সূচীপত্র ঃ যোহরের নামাজের ফজিলত
যোহরের নামাজের ফজিলত
যোহরের নামাজ ইসলামের পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। এর
অনেক ফজিলত ও বরকত হাদিস ও কুরআনের আলোকে বর্ণিত হয়েছে। নিচে যোহরের নামাজের
কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো:
১. গুনাহ মাফ হয়:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“তোমাদের কারো ঘরের দরজায় যদি একটি নদী থাকে এবং সে প্রতিদিন পাঁচবার
সেখানে গোসল করে, তাহলে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে?”
সাহাবিরা বললেন, “না, কোনো ময়লা থাকবে না।”
তিনি বললেন, “এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও তেমনি; আল্লাহ এর মাধ্যমে গুনাহসমূহকে মুছে
দেন।”
(সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
২. জান্নাতের দরজা খোলা হয়:
রাসুল (সা.) বলেন:
“যোহর নামাজের সময়ে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়।”
(সহিহ বুখারি)
৩. সালাতুল আওয়াবিন (তওবা কারীদের নামাজ):
যোহরের নামাজ এমন সময়ে পড়া হয়, যখন রোদের উত্তাপ থাকে এবং আল্লাহর প্রতি খাঁটি
ইচ্ছা নিয়ে মানুষ নামাজ পড়ে। এটি একজন মুমিনের খাঁটি ঈমান ও ত্যাগের নিদর্শন।
৪. জুমার প্রস্তুতি:
সপ্তাহের যোহরের নামাজই জুমার নামাজ। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ বরকতময়
দিন ও নামাজ।
৫. আল্লাহর ছায়া লাভ:
হাদিসে এসেছে,
“সাত শ্রেণির লোক কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে... তাদের
মধ্যে একজন হলেন, যিনি একাকীত্বে আল্লাহকে স্মরণ করে কেঁদেছেন এবং এমন ব্যক্তি যে
মসজিদে তার হৃদয় ঝুঁকে থাকে।”
(সহিহ বুখারি)
যোহরের নামাজ নিয়মিতভাবে আদায় করলে এসব ফজিলতের অধিকারী হওয়া যায়।
যোহরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে জানালাম এখন গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নিন।
যোহর নামাজের গুরুত্ব
যোহরের নামাজের গুরুত্ব ইসলামে অত্যন্ত বেশি, কারণ এটি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ
নামাজের অন্যতম প্রধান নামাজ। নিচে যোহরের নামাজের গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে তুলে
ধরা হলো:
১. ফরজ ইবাদত হিসেবে যোহর নামাজ:
যোহরের নামাজ হলো ফরজ (আবশ্যিক) ইবাদত, যা মহান আল্লাহ কুরআনে ও তাঁর রাসূল (সা.)
হাদিসে আদায় করতে বলেছেন।
আল্লাহ বলেন:
"নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ করা হয়েছে।"
সূরা নিসা: ১০৩
২. দিনব্যাপী ইবাদতের কেন্দ্রবিন্দু:
যোহরের সময়টা দিনের মাঝামাঝি, যখন মানুষ দুনিয়াবি কাজে ব্যস্ত থাকে। এই সময়ে
নামাজ আদায় করার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং আল্লাহ তা'আলার
স্মরণে নিজেকে পুনরায় যুক্ত করে।
৩. কিয়ামতের দিন নিরাপত্তা:
হাদিসে এসেছে:
"কিয়ামতের দিন বান্দার প্রথম হিসাব নেওয়া হবে নামাজের বিষয়ে। যদি তার নামাজ
সঠিক হয়, তবে তার অন্যান্য আমলও সঠিক হবে।"
তিরমিজি: ৪১৩
৪. দোয়া কবুলের সময়:
যোহরের পর দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময় বলা হয়েছে। সাহাবিগণ এই সময়ে আল্লাহর
কাছে বেশি বেশি দোয়া করতেন।
৫. জান্নাত লাভের সুযোগ:
যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, বিশেষ করে যোহরের নামাজ সময়মতো পড়ে, তাদের জন্য
জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
৬. মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্তি:
মুনাফিকরা আলস্য করে যোহর ও ফজরের নামাজে গাফেল থাকে। রাসূল (সা.) বলেছেন:
"মুনাফিকদের ওপর সবচেয়ে ভারী নামাজ হলো ফজর ও ইশা।"
সহিহ বুখারি
যারা নিয়মিত যোহরের নামাজ আদায় করে, তারা এই গাফলতি ও মুনাফিকত্ব থেকে রক্ষা পায়।
যোহর নামাজের গুরুত্ব পড়ে নিলেন এইবার সময়টাও জানা যাক চলুন।
যোহর নামাজের সময়
যোহর নামাজের সময় শুরু হয় সূর্য Zenith (অর্থাৎ মধ্যাকাশে পৌঁছে হেলে পড়া শুরু
করার পর) থেকে এবং চলে আসরের নামাজের সময় শুরুর আগ পর্যন্ত।
বাংলাদেশের জন্য সাধারণভাবে যোহরের সময়সূচি:
শুরু: প্রায় দুপুর ১২:০০–১২:১৫ মিনিটে (ঋতুভেদে ভিন্ন হতে পারে)
শেষ: আসরের সময় শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত (প্রায় ৩:৩০–৪:০০ পর্যন্ত, ঋতুভেদে)
যোহর নামাজের সময় নির্ধারণের নিয়ম:
সূর্য যখন মাঝ আকাশ থেকে হেলে পড়ে পশ্চিম দিকে এগুতে শুরু করে তখন যোহরের সময়
শুরু হয়।
এই সময়ে ছায়া পূর্ব দিকে পড়ে এবং বাড়তে থাকে।
ছায়া যখন আসরের নির্দিষ্ট ছায়ার দৈর্ঘ্যে পৌঁছায় (এক বা দুই গুণ, হানাফি ও
অন্যান্য মাজহাব অনুযায়ী ভিন্ন), তখন আসরের সময় শুরু হয়, এবং যোহরের সময় শেষ।
নির্ভুল নামাজের সময় জানার জন্য:
আপনি স্থানভেদে নামাজের সঠিক সময় জানতে চাইলে, আমি আপনার এলাকার নাম জানলে ওয়েব
থেকে সঠিক সময় বের করে দিতে পারি।
যোহর নামাজের সময় জেনে নিয়েছেন এখন রাকাত সংখ্যা দেখে নিন।
যোহর নামাজের রাকাত সংখ্যা
যোহর নামাজের রাকাত সংখ্যা মোট ১২ রাকাত, যার মধ্যে কিছু সুন্নত এবং কিছু ফরজ।
যোহর নামাজের রাকাত বিশ্লেষণ:
১. ৪ রাকাত সুন্নত (মুয়াক্কাদা) — নামাজের আগে
২. ৪ রাকাত ফরজ — আবশ্যিক (ইমামের পেছনে জামাত সহ বা একা)
৩. ২ রাকাত সুন্নত (মুয়াক্কাদা) — ফরজের পরে
৪. ২ রাকাত নফল (সুন্নতের পরে পড়া উত্তম)
সংক্ষেপে:
নামাজ রাকাত ধরন সময়
১ম ৪ সুন্নত মুয়াক্কাদা ফরজের আগে
২য় ৪ ফরজ ইমামের সাথে/একা
৩য় ২ সুন্নত মুয়াক্কাদা ফরজের পরে
৪র্থ ২ নফল (অতিরিক্ত ইবাদত) শেষে
মুয়াক্কাদা সুন্নত হলো এমন সুন্নত যা রাসুল (সা.) নিয়মিত আদায় করতেন এবং না
পড়লে তিরস্কারযোগ্য বলে গণ্য।
যোহর নামাজের রাকাত সংখ্যা জানালাম আপনাদের নামাজের নিয়মকানুন জেনে নেওয়া যাক চলুন।
যোহর নামাজের নিয়ম
যোহর নামাজের পূর্ণ নিয়ম নিচে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো। যোহর নামাজ মোট ১২
রাকাত — এর মধ্যে রয়েছে সুন্নত, ফরজ, এবং নফল নামাজ।
যোহর নামাজের রাকাতভিত্তিক নিয়ম:
রাকাত নাম ধরন আদায়ের নিয়ম
৪ প্রথম সুন্নত মুয়াক্কাদা (পড়তেই হবে) ফরজের আগে
৪ ফরজ ফরজ (আবশ্যিক) জামাতে বা একা
২ দ্বিতীয় সুন্নত মুয়াক্কাদা ফরজের পরে
২ নফল ইচ্ছাধীন বেশি সওয়াবের জন্য
প্রতিটি রাকাতে আদায়ের ধাপ (সাধারণ নিয়ম):
১. নিয়ত করা — মনে মনে অথবা মুখে বলবেন, উদাহরণ:
"আমি দুই/চার রাকাত যোহরের সুন্নত/ফরজ নামাজ আদায় করছি, আল্লাহর উদ্দেশ্যে
মুখ কাবার দিকে।"
২. তাকবির — “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু করবেন।
৩. দোয়া সানা পড়া — “সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা…”
৪. সূরা ফাতিহা এবং এরপর কুরআনের যেকোনো একটি সূরা বা আয়াত পড়া।
৫. রুকু — “সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম” তিনবার বলা।
৬. সিজদাহ — দুইবার সিজদা করবেন, প্রতিবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” বলা।
৭. দুই রাকাত শেষে বৈঠক (তাশাহহুদ) — “আত্তাহিয়্যাতু...” পড়বেন।
৮. চার রাকাত হলে আবার দাঁড়িয়ে বাকি দুই রাকাত আদায় করবেন।
৯. শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ + দরুদ শরিফ + দোয়া পড়বেন।
১০. সালাম ফিরানো — ডানে ও বামে “আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলবেন।
সংক্ষেপে যোহর নামাজের নিয়ম (১২ রাকাত):
১. ৪ রাকাত সুন্নত মুয়াক্কাদা
২. ৪ রাকাত ফরজ (জামাতে উত্তম)
৩. ২ রাকাত সুন্নত মুয়াক্কাদা
৪. ২ রাকাত নফল (ইচ্ছা হলে)
যোহর নামাজের নিয়ম জানালাম এই নামাজ আদায়ের উপকারিতা জানা যাক এইবার তাহলে চলুন।
যোহরের নামাজ আদায়ের উপকারিতা
যোহরের নামাজ আদায়ের উপকারিতা অনেক। এটি কেবল আখিরাতের জন্যই নয়, বরং দুনিয়ার
জীবনেও শান্তি, সফলতা ও মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। নিচে যোহরের নামাজ আদায় করার
কিছু দুনিয়াবি ও আখিরাতভিত্তিক উপকারিতা দেওয়া হলো:
আখিরাতের উপকারিতা:
১. গুনাহ মাফ হয়
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুনাহ মুছে ফেলে।
রাসুল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, তার ছোট গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়।”
(সহিহ মুসলিম)
২. জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়
নিয়মিত যোহরের নামাজ আদায় করলে জান্নাত লাভের প্রতিশ্রুতি আছে।
৩. কিয়ামতের দিন নিরাপত্তা
নামাজ হলো কিয়ামতের দিন প্রথম হিসাবের বিষয়। সঠিকভাবে যোহরের নামাজ পড়লে পূর্ণ
হিসাব সহজ হবে।
৪. মুনাফিকত্ব থেকে মুক্তি
যোহর ও ফজরের নামাজ মুনাফিকরা ফেল করে। যারা নিয়মিত পড়ে, তারা এই বৈশিষ্ট্য
থেকে দূরে থাকে।
দুনিয়াবি উপকারিতা:
১. মানসিক প্রশান্তি ও চাপমুক্তি
ব্যস্ত দিনের মাঝখানে যোহরের নামাজ মানুষকে আল্লাহর স্মরণ করিয়ে দেয় এবং মানসিক
চাপ হালকা করে।
২. নিয়ম-শৃঙ্খলা তৈরি করে
নিয়মিত সময়ে নামাজ পড়া মানুষকে সময়ানুবর্তী ও শৃঙ্খলাপূর্ণ করে তোলে।
৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য
নামাজের জন্য ওজু করতে হয়, যা দৈহিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে। রুকু-সিজদার
মাধ্যমে শরীরও নমনীয় ও সুস্থ থাকে।
৪. আধ্যাত্মিক উন্নতি
আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় হয়। অন্তরে তাকওয়া ও খোদাভীতি সৃষ্টি হয়।
উপসংহার:
যোহরের নামাজ শুধু একটা ইবাদত নয়, এটা বান্দার জীবনকে আলোকিত করে, পাপ থেকে দূরে
রাখে এবং দুনিয়া-আখিরাতে সাফল্যের পথ খুলে দেয়।
যোহরের নামাজ আদায়ের উপকারিতা পড়লেন এরপর জানা যাক বাংলাতে এই নামাজের নিয়ত।
যোহরের নামাজের নিয়ত বাংলায়
নিশ্চিত! এখানে যোহর নামাজের নিয়ত (বাংলায়) দেওয়া হলো, যা নামাজ শুরু করার আগে
মনে মনে বা হালকা স্বরে বলা যায়:
যোহর নামাজের নিয়ত (৪ রাকাত ফরজের জন্য):
“আমি ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করছি যোহরের, আল্লাহর উদ্দেশ্যে, মুখ কাবার দিকে।”
৪ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত:
“আমি ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করছি যোহরের, আল্লাহর উদ্দেশ্যে, মুখ কাবার
দিকে।”
২ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত (ফরজের পরে):
“আমি ২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করছি যোহরের, আল্লাহর উদ্দেশ্যে, মুখ কাবার
দিকে।”
২ রাকাত নফল নামাজের নিয়ত (ইচ্ছামতো):
“আমি ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করছি যোহরের, আল্লাহর উদ্দেশ্যে, মুখ কাবার দিকে।”
নিয়ত মূলত আপনার মনে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায়ের ইচ্ছা স্থির করা। মুখে বললেও হয়, না বললেও চলে।
পরিশেষেঃ যোহরের নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব এবং সময় ও উপকারিতা জানুন
এইরকম তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং আমাদের সার্ভিস সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url