দৈনিক ৫ বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত কি জানুন

নামাজের ফজিলত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত কি জানতে  আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়ুন।
দৈনিক ৫ বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত কি | জানবো আমরা । janbo amra |
দৈনিক ৫ বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত কি 
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত কি জানার পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস জানতে পারবেন আর্টিকেলটিতে।

সূচীপত্র ঃ দৈনিক ৫ বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত কি

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলিম জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এর ফজিলত ও গুরুত্ব কুরআন ও হাদীসে বারবার বর্ণিত হয়েছে। নিচে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কিছু প্রধান ফজিলত তুলে ধরা হলো:

১. আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া

নামাজ আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপনের প্রধান মাধ্যম। কুরআনে বলা হয়েছে:

 "নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।"

(সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত ৪৫)

২. গুনাহ মাফ হয়

রাসূল (সা.) বলেছেন:

 “তোমরা কি মনে করো, কেউ যদি নদীতে দিনে পাঁচবার গোসল করে, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে?” সাহাবিরা বললেন, না।

তিনি বললেন, এমনই নামাজ; তা গুনাহগুলো ধুয়ে ফেলে।”

(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

৩. কিয়ামতের দিন আলো ও নিরাপত্তা

রাসূল (সা.) বলেছেন:

 “যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, কিয়ামতের দিন তার জন্য নামাজ আলো, দলিল ও মুক্তির কারণ হবে।”

(মুসনাদ আহমদ)

৪. রিজিক ও বরকতের দরজা খুলে যায়

নামাজ ব্যক্তি ও সমাজে বরকত আনয়ন করে, কারণ তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।

৫. জান্নাত লাভের পথ সুগম হয়

নিয়মিত নামাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। কুরআনে বলা হয়েছে:

 “যারা নামাজে মনোযোগী, তারাই জান্নাতের উত্তরাধিকারী হবে।”

(সূরা আল-মু’মিনূন, আয়াত ১-১১)
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত তা জানলেন এখন প্রতি ওয়াক্ত এর ফজিলত জানুন। 

প্রতি ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত

নিচে প্রতিটি ওয়াক্ত নামাজের (ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, এশা) আলাদা আলাদা ফজিলত তুলে ধরা হলো—কুরআন ও হাদীসের আলোকে:

১. ফজর নামাজের ফজিলত:

বিশেষ বরকত:

রাসূল (সা.) বলেন,

 “তোমাদের প্রভু বলেন: ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) আমার কাছে দুনিয়া ও এর সমস্ত কিছুর চেয়ে উত্তম।”

(সহীহ মুসলিম)

ফেরেশতা সাক্ষী দেয়:

 “নিশ্চয়ই ফজর ও আসরের নামাজে ফেরেশতারা সাক্ষী হয়ে থাকে।”

(সহীহ বুখারী)

২. যোহর নামাজের ফজিলত:

গুনাহ মোচন:

রাসূল (সা.) বলেন:

 “যোহর নামাজ যখন সূর্য ঢলে পড়ে, তখন তা (নামাজ) তোমার গুনাহকে ধুয়ে ফেলে।”

(তিরমিজি)

রহমতের সময়:

এই সময়টা হচ্ছে দিনের মাঝখান—ব্যস্ততার মাঝেও আল্লাহর স্মরণ করার মাধ্যমে মন প্রশান্ত হয়।

৩. আসর নামাজের ফজিলত:

জান্নাতের ওয়াদা:

রাসূল (সা.) বলেন:

 “যে ব্যক্তি আসরের নামাজ নিয়মিত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

(বুখারী ও মুসলিম)

সময়ের গুরুত্ব:

 “যে ব্যক্তি আসরের নামাজ নষ্ট করল, তার সব আমল নষ্ট হয়ে যাবে।”

(সহীহ বুখারী)

৪. মাগরিব নামাজের ফজিলত:

তাওবা ও মাগফিরাতের সময়:

দিনের কাজ শেষে মাগরিব হলো আল্লাহর কাছে ফিরে আসার উপযুক্ত সময়।

নবীজি (সা.) মাগরিব নামাজ দ্রুত আদায় করতেন:

এটি সময় মত পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫. এশা নামাজের ফজিলত:

রাতভর ইবাদতের সওয়াব:

রাসূল (সা.) বলেন:

 “যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে, সে যেন পুরো রাত ইবাদতে কাটালো।”

(সহীহ মুসলিম)

বিশ্রামের পূর্বে আল্লাহর স্মরণ:

এশা নামাজ মানুষকে দিনের সমস্ত গুনাহ থেকে মুক্ত করে এবং প্রশান্তি দেয়।

প্রতিটি নামাজের সময়, ফজিলত, ও উপকারিতা ভিন্ন হলেও—all পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিলেই একজন মুসলিমের ঈমান ও জীবনের রক্ষাকবচ।
প্রতি ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত পড়লেন এখন ৪০ ওয়াক্ত এর ফজিলত দেখে নিন। 

মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত

মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার একটি বিশেষ ফজিলত হাদীসে এসেছে, যা মুসলমানদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। নিচে এ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত

হাদীস:

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

 "যে ব্যক্তি আমার মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, যেন সে একটি নামাজও না ফস করে, তার জন্য দু’টি নিরাপত্তা লেখা হয়—জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা ও নিফাক (কপটতা) থেকে নিরাপত্তা।"

(মুসনাদ আহমদ, হাদীস: ১২১৩৬; তিরমিজি ও তাবারানি বর্ণনা করেছেন)

এই হাদীস থেকে বুঝা যায়:

১. জাহান্নাম থেকে রক্ষা:

এই ৪০ ওয়াক্ত নামাজ ব্যক্তি যেহেতু আন্তরিকতা ও ধারাবাহিকতা সহকারে পড়েন, তাই আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে হেফাজত করেন।

২. মুনাফিকি থেকে মুক্তি:

মুনাফিকরা সাধারণত জামাআতের নামাজে গাফেল থাকে। কিন্তু কেউ যদি ৮ দিনেরও বেশি সময় জামাআতে একটানা নামাজ পড়ে, তার ভেতরে নিফাকের চিহ্ন থাকে না।

৩. সবর ও ইখলাসের পরীক্ষা:

দিনে ৫ ওয়াক্ত করে ৮ দিন টানা নামাজ পড়া অনেক পরিশ্রম ও নিয়তের কাজ, যা আল্লাহর বিশেষ সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।

উল্লেখযোগ্য দিক:

৪০ ওয়াক্ত মানে: ৮ দিনেরও কিছু বেশি সময় (৮ দিন * ৫ নামাজ = ৪০ নামাজ)।

শর্ত: জামাআতের সাথে পড়তে হবে এবং কোনো নামাজ বাদ না দেওয়া।

মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুধু একটি আমল নয়, বরং তা নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য, ইখলাস ও অধ্যবসায়ের পরিচয়। এতে একজন মুমিন জাহান্নাম থেকে নিরাপদ ও মুনাফিকদের তালিকা থেকে মুক্ত থাকবে ইনশাআল্লাহ।

মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত পড়ে নিলেন এখন জানুন আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত সম্পর্কে। 

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করার ফজিলত অনেক মহান এবং তা নির্ভরযোগ্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এটি একজন মুমিনকে নিরাপত্তা, বরকত এবং জান্নাতের পথে পরিচালিত করে।

হাদীস অনুযায়ী আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত:

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

 “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার মৃত্যু ছাড়া তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে কিছুই বাধা দিতে পারবে না।”

(নাসাঈ, হাদীস: ৯৯২৮; সহীহুল জামে: ৬৪৬৪, হাদীসটি হাসান)

এই হাদীস থেকে বুঝা যায়:

১. জান্নাতের নিশ্চয়তা:

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠকারী ব্যক্তি জান্নাতের উপযুক্ত হয়ে যায়।

২. মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু তাকে জান্নাত থেকে আটকাতে পারে না, অর্থাৎ সে নিশ্চিত জান্নাতপ্রাপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ।

৩. আল্লাহর হেফাজত ও নিরাপত্তা:

আয়াতুল কুরসি আল্লাহর গুণাবলির সবচেয়ে বিস্ময়কর বর্ণনা। এটি পড়লে বান্দা শয়তান ও বিপদ থেকে নিরাপদ থাকে।

কেন আয়াতুল কুরসি এত গুরুত্বপূর্ণ?

এটি কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত (সূরা আল-বাকারা: ২৫৫)।

এতে আল্লাহর আরশ, কুদরত, জ্ঞান ও হেফাজতের বর্ণনা আছে।

এটি ইমানের শক্তিশালী প্রকাশ।

প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা এক সহজ কিন্তু অত্যন্ত মূল্যবান আমল, যা জান্নাতের দরজা খুলে দেয় এবং আল্লাহর হেফাজতে রাখে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত জানালাম এইবার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস জেনে নিন চলুন। 

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। নিচে নির্ভরযোগ্য হাদীস থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতের উল্লেখ করা হলো:

১. নামাজ গুনাহ মোচন করে

রাসূল (সা.) বলেন:

 "তোমরা কল্পনা করো, কারো ঘরের দরজার সামনে একটি নদী আছে, যেখানে সে প্রতিদিন পাঁচবার

 গোসল করে—তাহলে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে?"

সাহাবিরা বললেন, "না, কোনো ময়লা থাকবে না।"

তিনি বললেন, ঠিক তেমনি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আল্লাহ বান্দার গুনাহ মুছে দেন।

(সহীহ বুখারী: ৫২৮, সহীহ মুসলিম: ৬৬৮)

২. জান্নাতের ওয়াদা

রাসূল (সা.) বলেন:

 “যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের অঙ্গীকার রয়েছে।”

(মুসনাদ আহমদ: ১৪৬৫, সহীহ)

৩. নামাজ আলো, প্রমাণ ও মুক্তির কারণ

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

 “নামাজ হলো (মুসলিমের জন্য) আলো, প্রমাণ, এবং কিয়ামতের দিন মুক্তির মাধ্যম।”

(সহীহ মুসলিম: ২২৩)

৪. নামাজ মুনাফিকি থেকে রক্ষা করে

রাসূল (সা.) বলেন:

“মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে ভারী নামাজ হলো এশা ও ফজর। তারা যদি জানত এতে কী আছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আসত।”

(সহীহ বুখারী: ৬৫৭, সহীহ মুসলিম: ৬৫১)

৫. নামাজ দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার চাবিকাঠি

আল্লাহ তাআলা বলেন:

 “নিশ্চয়ই মু’মিনগণ সফল হয়েছে—যারা তাদের নামাজে খুশু-খুজু প্রদর্শন করে।”

(সূরা আল-মু’মিনূন: ১-২)

উপসংহার:  দৈনিক ৫ বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত কি জানুন 

নামাজ শুধু ফরজ বিধান নয়, বরং এটি জান্নাতের চাবি, গুনাহ মোচনের মাধ্যম, ঈমানের প্রমাণ এবং কিয়ামতের মুক্তির দলিল। 

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া একজন মুসলমানের জন্য পৃথিবী ও পরকালের সাফল্যের নিশ্চয়তা। এইরকম তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং আমাদের সার্ভিস সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url