ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি ও হাদিস জানুন

ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি, ফজরের নামাজ না উঠলে কি করব এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে  আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়ুন
ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি | জানবো আমরা । janbo amra |
ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি

ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি জানার পাশাপাশি ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি হাদিস জানতে পারবেন।

সূচীপত্র ঃ ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি

ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি

ইসলাম ধর্মে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ, যার মধ্যে ফজরের নামাজ অন্যতম। ফজরের নামাজ না পড়া গুনাহের কাজ, এবং এটি নিয়মিতভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেওয়া হলে এর শাস্তি রয়েছে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

১. কুরআনের দৃষ্টিতে:

আল্লাহ তাআলা বলেন:

 "নামাজ তো মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ করা হয়েছে।"

 [সূরা আন নিসা: ১০৩]

যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ফজরের নামাজ না পড়ে, সে এই ফরজ আদায় না করার দ্বারা গোনাহগার হয়।

২. হাদীসের দৃষ্টিতে:

হাদীসে এসেছে:

 "আমাদের ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ফজর এবং এশার নামাজ; তারা এই দুই নামাজে আসতে পারে না।"

 (সহীহ মুসলিম)

এছাড়াও বলা হয়েছে, নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে না পড়লে কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে।

৩. শাস্তি সম্পর্কে:

যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে নামাজ বিশেষ করে ফজরের নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়, তার সম্পর্কে কঠোর সতর্কতা এসেছে:

আখিরাতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

কবরের শাস্তি এবং হাশরের দিনে আল্লাহর গজবের শিকার হতে পারে।

জাহান্নামে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪. করণীয়:

তাওবা করা: নামাজ ছেড়ে দিলে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

নিয়মিত নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত হওয়া।

আলসেমি ও অবহেলা পরিহার করা।
ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি জানলেন এইবার শাস্তি হাদিস সম্পর্কে জানুন।

ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি হাদিস

ফজরের নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে না পড়া নিয়ে কোরআন ও হাদিসে বেশ কিছু কঠিন সতর্কতা এসেছে। নিচে ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কিত কিছু সহীহ হাদিস তুলে ধরা হলো:

১. মুনাফিকদের পরিচয়

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

 "মুনাফিকদের ওপর সবচেয়ে ভারি নামাজ হলো এশা ও ফজরের নামাজ। যদি তারা জানত এতে কী আছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তা আদায় করতে আসত।"

 (সহীহ বুখারী: ৬৫৭, সহীহ মুসলিম)

ব্যাখ্যা: এই হাদিসে বোঝানো হয়েছে, ফজর ও এশার নামাজ না পড়া মুনাফিকদের স্বভাব, এবং প্রকৃত মুমিন কখনো তা অবহেলা করে না।

২. ঘুমিয়ে ফজরের নামাজ মিস করা

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

 "যে ব্যক্তি একটি নামাজ ছেড়ে দেয়, তার উপর জাহান্নামের আগুনে একটি দাগ পড়বে।"

 (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা)

৩. নামাজ না পড়ার শাস্তি

রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বপ্নে দেখেছেন কিছু লোকের শাস্তি:

 "এক লোকের মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ করা হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটির কী অপরাধ? ফেরেশতারা বলল: এ ব্যক্তি কুরআন শিখে রাতে ঘুমিয়ে পড়ত এবং দিনে নামাজ আদায় করত না।"

 (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৭০৪৭)

৪. সুফল হারানোর সতর্কতা

নবী (সা.) বলেছেন:

 "ফজরের নামাজ যে জামাতে আদায় করে, সে যেন পুরো রাত ইবাদতে কাটাল।"

 (সহীহ মুসলিম)

অর্থাৎ: যারা ফজর পড়ে না, তারা এ মহান সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়।

উপসংহার:

ফজরের নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে না পড়া মারাত্মক গোনাহ এবং এতে জাহান্নামের শাস্তির হুমকি এসেছে। এ জন্য তাওবা করা এবং নামাজের গুরুত্ব বুঝে তা নিয়মিত আদায় করা উচিত।
ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি হাদিস জানলেন নামাজ এর সময় না উঠলে কি করব জানুন। 

ফজরের নামাজ না উঠলে কি করব

ফজরের নামাজে উঠতে না পারা অনেকেরই সাধারণ সমস্যা, কিন্তু ইসলামically তা অবহেলা করলে গোনাহ হয়। তবে আপনি চেষ্টা করছেন—এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু কার্যকর পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আপনি নিয়মিত ফজরের নামাজে উঠতে পারেন:

১. নিয়ত ও ইখলাস (মনোযোগ):

সর্বপ্রথম, মনে শক্ত নিয়ত করুন—"আমি অবশ্যই ফজরের নামাজে উঠব, ইনশাআল্লাহ"। নিয়তই আমলের ভিত্তি।

২. রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো:

রাত জেগে মোবাইল বা অন্য কাজে সময় না দিয়ে, চেষ্টা করুন ১০টা-১১টার মধ্যে ঘুমাতে। ঘুম সময়মতো না হলে উঠাও কষ্টকর হয়।

৩. অ্যালার্মে কৌশল:

একটার জায়গায় একাধিক অ্যালার্ম দিন ৫-১০ মিনিট ব্যবধানে।

ফোন বা অ্যালার্ম ঘড়ি নিজের হাতের নাগালের বাইরে রাখুন—উঠে বন্ধ করতে হবে যেন।

৪. কাউকে বলে রাখা:

পরিবারের কেউ যদি ওঠে, তাহলে আপনাকে জাগানোর অনুরোধ করুন। প্রয়োজনে বন্ধুকেও দায়িত্ব দিতে পারেন।

৫. ঘুমানোর আগে দোয়া:


ঘুমানোর সময় এই দোয়াটি পড়ুন:

 اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ المُتَهَجِّدِينَ وَمِنَ القَائِمِينَ لِلصَّلَاةِ الفَجْرِ

“হে আল্লাহ! আমাকে তাহাজ্জুদের এবং ফজরের নামাজে দাঁড়ানোদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”

৬. উঠতে না পারলে করণীয়:

যদি কখনো না উঠতে পারেন:

সকালেই উঠে সাথে সাথে নামাজ কাজা আদায় করুন।

হাদীসে আছে:

 "যে ব্যক্তি ঘুমিয়ে বা ভুলে নামাজ পড়ে না, সে যেন তা স্মরণ হলে পড়ে নেয়।" — (সহীহ মুসলিম)

৭. ফজরের নামাজের গুরুত্ব স্মরণ করুন:

প্রতিদিন নিজেকে মনে করান—এই নামাজটা আল্লাহর সবচেয়ে পছন্দের সময়ের ইবাদত। এর মাধ্যমে আপনি জান্নাতের পথে অগ্রসর হচ্ছেন।
ফজরের নামাজ না উঠলে কি করব জেনে নিয়েছেন এইবার এই নামাজ নিয়ে হাদিস জানুন। 

ফজরের নামাজ নিয়ে হাদিস

ফজরের নামাজের গুরুত্ব, ফজরে আদায়ের ফজিলত এবং তা না পড়ার ভয়াবহতা নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হাদিস রয়েছে। নিচে কিছু সহীহ হাদিস তুলে ধরা হলো:

১. ফজরের নামাজে জামাতে থাকার ফজিলত

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

 "যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে, সে যেন পুরো রাত ইবাদত করেছে।"

 (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৬৫৬)

২. ফজর ও এশার নামাজ—মুনাফিকদের চিহ্ন

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

 "মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন নামাজ হলো এশা ও ফজরের নামাজ। যদি তারা জানত এতে কী পুরস্কার আছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হতো।"

 (সহীহ বুখারী: ৬৫৭, মুসলিম)

৩. ফজর ও আসরের নামাজ জান্নাতের নিশ্চয়তা

রাসূল (সা.) বলেন:

 "যে ব্যক্তি ফজর ও আসরের নামাজ আদায় করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।"

 (সহীহ বুখারী: ৫৭৪, সহীহ মুসলিম)

৪. ফজরের নামাজ আল্লাহর হেফাজতে থাকা

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

 "যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে (আল্লাহ তাকে হেফাজত করবেন)।"

 (সহীহ মুসলিম: ৬৫৭)

৫. কিয়ামতের দিন আলো পাওয়ার ঘোষণা

নবী (সা.) বলেন:

 "তোমরা অন্ধকারে (রাতের) নামাজ আদায় করো—ফজর ও এশা, তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ আলো পাবে।"

 (তিরমিজি: ২২৩)

উপসংহার:

ফজরের নামাজ শুধু একটি ফরজ ইবাদত নয়, বরং এটি মুমিনের পরীক্ষা, নিরাপত্তা, ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক বিরাট সুযোগ। এটি অবহেলা না করে গুরুত্বসহকারে আদায় করা উচিত। ফজরের নামাজ নিয়ে হাদিস পড়লেন এখন পড়ে নিন সময়মতো এই নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক কিনা।

ফজরের নামাজ কি সময়মতো পড়া বাধ্যতামূলক

জী হ্যাঁ, ফজরের নামাজ সময়মতো পড়া বাধ্যতামূলক (ফরজ)। ইসলাম অনুযায়ী, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলে নামাজ কাজা হয়ে যায়, আর ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে নামাজ পড়া গোনাহ।

কোরআনের দলিল:

 "নামাজ মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময়ে ফরজ করা হয়েছে।"

(সূরা আন নিসা: ১০৩)

এই আয়াতে বলা হয়েছে—নামাজের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে, তা আদায় না করলে দায়িত্ব পালন হয় না।

ফজরের নামাজের সময়সীমা:

সময় শুরু: সুবহে সাদিক (ফজরের আলো ফোটার সময়)

শেষ সময়: সূর্য ওঠার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত

যদি কেউ ঘুমিয়ে পড়ে বা কোনো বৈধ কারণে সময়মতো না পড়তে পারে, তাহলে স্মরণ হলে সঙ্গে সঙ্গে পড়ে নিতে হবে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করলে তা গোনাহ।

হাদীস থেকে শিক্ষা:

 "যে নামাজ সময়মতো পড়ে, তা জান্নাতের চাবি। আর যে দেরি করে পড়ে, তার ব্যাপারে আল্লাহ জানেন কী করবেন।"

(তাবারানী)

উপসংহার:

ফজরের নামাজ সময়মতো পড়া বাধ্যতামূলক। তা ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে পড়া কিংবা অলসতা করে মিস করা মারাত্মক গোনাহ। তাই যতটা সম্ভব সতর্ক থাকা উচিত।
ফজরের নামাজ কি সময়মতো পড়া বাধ্যতামূলক জানালাম এখন জানুন ১১ টায় ফজরের নামাজ পড়া যাবে কিনা। 

১১ টায় ফজরের নামাজ পড়া যাবে কি


না, ১১ টায় ফজরের নামাজ পড়া যাবে না। কারণ:

ফজরের নামাজের নির্ধারিত সময়:

শুরু: সুবহে সাদিক (ভোরে আকাশে আলো ফোটার সময়)

শেষ: সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ফজরের নামাজের সময় শেষ হয়ে যায় (প্রায় ভোর ৬টা-৬:৩০ পর্যন্ত, সময় ও অবস্থানভেদে ভিন্ন হতে পারে)।

১১টা বাজে ফজরের নামাজ পড়া হলে কী হবে?

আপনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে থাকেন (ঘুম বা অলসতার কারণে), তবে এটা গুনাহ হবে, এবং এ নামাজ "কাজা" হিসেবে আদায় করতে হবে।

কাজা নামাজ পড়া যাবে, কিন্তু এর মূল সওয়াব আপনি পাবেন না।

হাদিস থেকে সতর্কতা:

 "যে ব্যক্তি কোনো নামাজ ঘুমিয়ে বা ভুলে না পড়ে, সে যেন স্মরণ হলে সঙ্গে সঙ্গে পড়ে নেয়।"

(সহীহ মুসলিম)

আপনার করণীয়:

১. এখনই (১১টায়) উঠে ফজরের কাজা নামাজ পড়ে নিন।

২. আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইুন এবং আবার যেন এ ভুল না হয় সেই দোয়া করুন।

৩. পরবর্তী দিনগুলোতে ফজরের সময়মতো উঠার চেষ্টা করুন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url