ঘরে প্রবেশের দোয়া বাংলা ও আরবি এবং দোয়ার উপকারিতা
ঘরে প্রবেশের দোয়া বাংলা ও আরবি,হাদিসের বর্ণনায় গৃহে প্রবেশের শিষ্টাচার ও নিয়মাবলী এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়ুন।
![]() |
ঘরে প্রবেশের দোয়া বাংলা ও আরবি |
ঘরে প্রবেশের দোয়া বাংলা ও আরবি জানার পাশাপাশি দোয়ার ফজিলত ও
তাৎপর্য ,দোয়ার উপকারিতা জানতে পারবেন।
সূচীপত্রঃ ঘরে প্রবেশের দোয়া বাংলা ও আরবি
- ঘরে প্রবেশের দোয়া বাংলা ও আরবি
- ঘরে প্রবেশের সময় যে দোয়া পড়তে বলেছেন নবীজি
- ঘরে প্রবেশের দোয়ার ফজিলত ও তাৎপর্য
- ঘরে প্রবেশের দোয়ার নিয়মাবলী ও আদব
- ঘরে প্রবেশের দোয়ার উপকারিতা
- ঘরে প্রবেশের দোয়া না পড়ার কুফল ও সতর্কতা
- বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ঘরে প্রবেশের দোয়া
- ঘরে প্রবেশের দোয়া সম্পর্কিত ভুল ধারণা ও সঠিক ব্যাখ্যা
ঘরে প্রবেশের দোয়া বাংলা ও আরবি
ঘরে প্রবেশের সময় পড়ার দোয়া নিচে বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ দেওয়া হলো:
আরবি:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ، بِسْمِ
اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا
تَوَكَّلْنَا
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাল মাওলাজি ওয়া খাইরাল মাখরাজ, বিসমিল্লাহি
ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।
বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ঘরে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার কল্যাণ কামনা করি। আল্লাহর
নামে আমরা প্রবেশ করি, আল্লাহর নামেই বাহির হই এবং আমাদের পালনকর্তা আল্লাহর ওপরই
আমরা ভরসা করি।
এই দোয়াটি ঘরে ঢোকার সময় পড়লে তা বরকত ও নিরাপত্তা আনে ইনশাআল্লাহ। ঘরে
প্রবেশের দোয়া বাংলা ও আরবি জানলেন এইবার গৃহে প্রবেশের শিষ্টাচার সম্পর্কে
জানুন।
হাদিসের বর্ণনায় গৃহে প্রবেশের শিষ্টাচার
ইসলামী হাদিসে গৃহে প্রবেশের শিষ্টাচার সম্পর্কে বেশ কিছু নির্দেশনা রয়েছে, যা
একজন মুসলমানকে শালীনতা, ভদ্রতা ও তাকওয়ার পরিচয় দেয়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ
শিষ্টাচার হাদিসের আলোকে তুলে ধরা হলো:
১. সালাম দিয়ে প্রবেশ করা
আল-কুরআন:
"فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ
عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً"
(সূরা আন-নূর, আয়াত ৬১)
অর্থ: যখন তোমরা কোন গৃহে প্রবেশ করো, তখন নিজেদের প্রতি সালাম দাও; এটা আল্লাহর
পক্ষ থেকে এক কল্যাণময় ও উত্তম দোয়া।
হাদিস:
রাসূল (সা.) বলেন:
"যখন কেউ নিজের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং সালাম দেয়, তখন শয়তান বলে: 'এখানে তোমার
জন্য থাকার জায়গা নেই, আর খাবারও নেই'।"
(মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ৫৪২৫)
২. ঘরে ঢোকার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা
হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যখন কেউ ঘরে প্রবেশের সময় এবং খাবার খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে, তখন শয়তান
বলে, ‘আজকের রাতে এখানে আমার কোন স্থান নেই এবং খাবারও নেই।’”
(সহীহ মুসলিম)
৩. অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা (অন্যের ঘরে)
আল-কুরআন:
"يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ
حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَىٰ أَهْلِهَا"
(সূরা আন-নূর, আয়াত ২৭)
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিজের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না,
যতক্ষণ না অনুমতি নাও এবং ঘরের লোকদের সালাম দাও।
৪. গোপনীয়তা রক্ষা ও দৃষ্টি সংযত রাখা
হাদিস:
রাসূল (সা.) বলেন:
"তুমি যদি কারো ঘরের দিকে উঁকি দাও আর সে যদি তোমার চোখে আঘাত করে, তাহলে তোমার
উপর কোন গুনাহ হবে না।"
(বুখারী, হাদিস: ৫৮৮৯)
এই আদবগুলো পালন করলে ঘরে প্রবেশের সময় বরকত, নিরাপত্তা ও পারস্পরিক সম্মান রক্ষা
হয়। হাদিসের বর্ণনায় গৃহে প্রবেশের শিষ্টাচার জানলেন এখন
জানুন নবীজি যে দোয়া পড়তে বলেছেন।
ঘরে প্রবেশের সময় যে দোয়া পড়তে বলেছেন নবীজি
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রবেশের সময় একটি বিশেষ দোয়া
পড়ার শিক্ষা দিয়েছেন, যা হাদিসে এসেছে:
দোয়া (আরবি):
بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا
تَوَكَّلْنَا
উচ্চারণ (বাংলা):
বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা
তাওয়াক্কালনা।
অর্থ:
আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করি, আল্লাহর নামেই বের হই, আর আমাদের পালনকর্তা
আল্লাহর ওপরই আমরা ভরসা করি।
হাদিসের উৎস:
এই দোয়া এসেছে সুনান আবু দাউদ (হাদিস: ৫০৯৬) এবং মুসনাদ আহমাদ-এ।
রাসূল (সা.) আরও বলেন:
"যখন কেউ ঘরে প্রবেশ করে এবং আল্লাহর নাম নেয়, শয়তান তখন বলে, 'এই ঘরে আমার থাকার
কোনো জায়গা নেই।'"
(সহিহ মুসলিম)
এই দোয়াটি ঘরে ঢোকার সময় নিয়মিত পড়া সুন্নাত, যা ঘরকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা
করে এবং বরকত ডেকে আনে। ঘরে প্রবেশের সময় যে দোয়া পড়তে বলেছেন নবীজি তা
পড়লেন এইবার দোয়ার ফজিলত ও তাৎপর্য জানা যাক।
ঘরে প্রবেশের দোয়ার ফজিলত ও তাৎপর্য
ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া পড়ার ফজিলত ও তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা হাদিসে
সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। নিচে এর ফজিলত ও তাৎপর্য তুলে ধরা হলো:
ঘরে প্রবেশের দোয়া:
بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا
تَوَكَّلْنَا
অর্থ:
আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করি, আল্লাহর নামেই বের হই, এবং আমাদের পালনকর্তা
আল্লাহর ওপর আমরা ভরসা করি।
এই দোয়ার ফজিলত ও তাৎপর্য
১. শয়তানের অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়
হাদিসে এসেছে:
“যখন কেউ ঘরে প্রবেশ করে এবং প্রবেশের সময় ও খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম নেয়,
তখন শয়তান বলে, ‘আজ রাতে তোমাদের এখানে আমার থাকার জায়গা নেই এবং খাওয়ার কিছুই
নেই।’”
সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০১৮
ব্যাখ্যা:
দোয়া ও ‘বিসমিল্লাহ’ বলার মাধ্যমে ঘর শয়তান থেকে নিরাপদ থাকে।
২. ঘরে বরকত আসে
আল্লাহর নাম নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলে ঘরে বরকত নেমে আসে, পারিবারিক শান্তি বজায় থাকে
এবং কলহ-বিবাদ কমে।
৩. তাওয়াক্কুল বা ভরসা আল্লাহর ওপর দৃঢ় হয়
দোয়ায় বলা হয়:
"وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا"
অর্থাৎ, আমরা আমাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করি।
এটি মুমিনের ঈমানি চিন্তা ও ভরসার প্রকাশ।
৪. সুন্নাত পালন হয়
এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়া। এটি পড়লে
সুন্নাত পালন হয়, যা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যম।
৫. পরিবারের জন্য সুরক্ষা ও দোয়ার সৌন্দর্য
এই দোয়া শুধু নিজের নয়, পুরো পরিবারের ওপর আল্লাহর হেফাজত কামনার একটি সূক্ষ্ম
উপায়।
সংক্ষেপে:
ঘরে প্রবেশের সময় এই দোয়া পাঠ করলে ঘর হয় নিরাপদ, শয়তান থাকে দূরে, আল্লাহর রহমত
ও বরকত বর্ষিত হয়, এবং এক ব্যক্তি একজন পরিপূর্ণ মুমিনের মতো জীবনযাপন করতে পারে।
ঘরে প্রবেশের দোয়ার ফজিলত ও তাৎপর্য জেনে নিয়েছেন এখন দোয়ার নিয়মাবলী ও
আদব জানুন।
ঘরে প্রবেশের দোয়ার নিয়মাবলী ও আদব
ঘরে প্রবেশের সময় ইসলাম যে নিয়মাবলী ও আদব (শিষ্টাচার) শিখিয়েছে, তা ব্যক্তি ও
পারিবারিক জীবনে শৃঙ্খলা, সম্মান এবং বরকত আনে। নিচে হাদিস ও কুরআনের আলোকে ঘরে
প্রবেশের দোয়া ও তার নিয়মাবলী সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
ঘরে প্রবেশের দোয়া:
بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا
تَوَكَّلْنَا
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি
রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।
অর্থ:
আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করি, আল্লাহর নামেই বের হই, এবং আমাদের প্রতিপালক
আল্লাহর ওপরই আমরা ভরসা করি।
ঘরে প্রবেশের নিয়মাবলী ও আদব:
১. সালাম দিয়ে প্রবেশ করা
আল্লাহ বলেন:
“তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ করলে তোমাদের নিজেদের প্রতি সালাম দাও।”
সূরা আন-নূর, আয়াত ৬১
হাদিস:
রাসূল (সা.) বলেন:
“তোমরা ঘরে প্রবেশ করলে সালাম দাও, এতে বরকত হবে।”
তিরমিজি, হাদিস: ২৬৯৮
২. আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) বলে প্রবেশ করা
এটি শয়তানের অনুপ্রবেশ ঠেকায়।
সহীহ মুসলিম
৩. দরজায় কড়া নাড়া বা অনুমতি চাওয়া (অন্যের ঘরে প্রবেশের সময়)
কুরআনে নির্দেশ: "তোমরা গৃহে প্রবেশের আগে অনুমতি নাও এবং সালাম দাও।"
সূরা আন-নূর, আয়াত ২৭
৪. হঠাৎ প্রবেশ না করা, চোখ নিচু রাখা
“যদি অনুমতি না পাও, তাহলে ফিরে যাও।”
সূরা আন-নূর, আয়াত ২৮
রাসূল (সা.) বলেন: “তোমরা জানালা বা দরজায় উঁকি দিও না।”
বুখারী, হাদিস: ৫৮৮৯
৫. ডান পা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করা
রাসূল (সা.) ডান দিক দিয়ে কাজ শুরু করতেন — যেমন: জুতো পরা, ঘরে প্রবেশ ইত্যাদি।
বুখারী ও মুসলিম
৬. মিষ্টভাষী ও হাসিমুখে ঘরে প্রবেশ
পরিবারকে সালাম ও দোয়ার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো, যা পরিবারে ভালোবাসা ও শান্তি
আনয়ন করে।
সংক্ষেপে:
ঘরে প্রবেশের সময়:
১. বিসমিল্লাহ বলুন
২. সালাম দিন
3. ডান পা দিয়ে প্রবেশ করুন
৪. হাদিসের দোয়া পড়ুন
৫. অন্য ঘরে ঢুকলে অনুমতি নিন
৬. ভদ্রতা ও নম্রতা বজায় রাখুন-
ঘরে প্রবেশের দোয়ার নিয়মাবলী ও আদব জানলেন দোয়ার উপকারিতাও জেনে নিন।
ঘরে প্রবেশের দোয়ার উপকারিতা
ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া পড়ার অনেক আধ্যাত্মিক, মানসিক এবং পারিবারিক উপকারিতা
রয়েছে। এই দোয়া শুধু একটি মুখস্থ বাক্য নয়, বরং এটি একটি নিরাপত্তা, বরকত ও
শান্তির চাবিকাঠি। নিচে এর গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
ঘরে প্রবেশের দোয়া:
بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا
تَوَكَّلْنَا
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি
রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।
উপকারিতা:
১. শয়তান ঘরে প্রবেশ করতে পারে না
রাসূল (সা.) বলেন:
“যখন কেউ ঘরে ঢোকে এবং আল্লাহর নাম নেয়, তখন শয়তান বলে, ‘আজ রাতে আমার থাকার
জায়গা নেই।’”
সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০১৮
২. ঘর ও পরিবার আল্লাহর হেফাজতে থাকে
আল্লাহর নামের মাধ্যমে ঘরে প্রবেশ করলে ঘর হয়ে ওঠে নিরাপদ আশ্রয়, যেখানে রহমত ও
হেফাজত নেমে আসে।
৩. পরিবারের মধ্যে বরকত ও ভালোবাসা আসে
দোয়া ও সালামের মাধ্যমে ঘরে প্রবেশ করলে পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত হয়, কলহ কমে।
৪. তাওয়াক্কুল বা ভরসা আল্লাহর প্রতি দৃঢ় হয়
দোয়ায় বলা হয়: “ওয়াআলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা” — এটি মুমিনের আত্মবিশ্বাস
ও আল্লাহর ওপর ভরসার প্রকাশ।
৫. সুন্নাত পালনের সওয়াব পাওয়া যায়
নবী (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করে দোয়া পড়লে সুন্নাত পালনের সওয়াব লাভ হয়।
৬. মানসিক প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়
আল্লাহর নাম স্মরণ মানসিক চাপ কমায় এবং আশ্বাস দেয় যে, আপনি আল্লাহর হেফাজতে
আছেন।
সংক্ষেপে:
- ঘরে প্রবেশের দোয়া পাঠ করলে:
- শয়তান দূরে থাকে
- বরকত নামে
- পরিবারে শান্তি আসে
- আপনি আল্লাহর হেফাজতে থাকেন
- সুন্নাত পালন হয়
ঘরে প্রবেশের দোয়ার উপকারিতা জানালাম দোয়া না পড়ার কুফল ও সতর্কতা পড়ে নিন এখন।
ঘরে প্রবেশের দোয়া না পড়ার কুফল ও সতর্কতা
ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া না পড়ার কিছু গুরুতর কুফল ও ক্ষতি আছে, যা আমাদের দুনিয়া
ও আখিরাতদুই দিকেই প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে হাদিসের আলোকে এর কুফল ও সতর্কতা তুলে
ধরা হলো:
ঘরে প্রবেশের দোয়া না পড়ার কুফল:
১. শয়তান ঘরে প্রবেশ করে
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"যখন কেউ ঘরে প্রবেশ করে এবং আল্লাহর নাম নেয় না, তখন শয়তান বলে, 'আজ রাতে এখানে
আমার থাকার জায়গা আছে'। আর যদি খাবারেও ‘বিসমিল্লাহ’ না বলে, শয়তান বলে, 'এখানে
আমার খাওয়ারও ব্যবস্থা আছে।'"
সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০১৮
কুফল:
শয়তান ঘরে প্রবেশ করে
কলহ, হিংসা, অবিশান্তি সৃষ্টি করে
ইমান ও আমলের দুর্বলতা দেখা দেয়
২. ঘর বরকতহীন হয়ে পড়ে
আল্লাহর নাম ছাড়া কোনো কাজ শুরু করলে তাতে বরকত থাকে না।
ফলাফল:
সংসারে অশান্তি
রিজিকে অনিশ্চয়তা
পারস্পরিক দুরত্ব
৩. সুন্নাত পরিত্যাগ হয়
দোয়া না পড়া মানে রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতকে অবহেলা করা।
ফলাফল:
আমল কমে যায়
সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া
ঈমান দুর্বল হওয়া
৪. পরিবারের সদস্যরা আত্মিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়
দোয়া হলো এক ধরনের রূহানী নিরাপত্তা। তা না পড়লে পরিবার দুষ্ট শক্তির প্রভাব,
হঠাৎ বিপদ বা অহেতুক ঝামেলার শিকার হতে পারে।
সতর্কতা: কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন?
১. নিয়মিত দোয়া পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
ঘরে ঢোকার সময় ছোট্ট এই দোয়া মনে রাখুন
শিশুদেরও শেখান
২. সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকুন
এটি কুরআনের স্পষ্ট আদেশ (সূরা আন-নূর: ৬১)
৩. দরজায় ঢোকার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলুন
অন্তত এইটুকু বললে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবেন
উপসংহার:
ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া না পড়লে ঘর হতে পারে শয়তানের আবাসস্থল। এতে দুনিয়ার
শান্তিও নষ্ট হয়, আখিরাতের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়। তাই এটি ছোট হলেও অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।
ঘরে প্রবেশের দোয়া না পড়ার কুফল ও সতর্কতা পড়েছেন এখন জানুন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ঘরে প্রবেশের দোয়া।
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ঘরে প্রবেশের দোয়া
ইসলামে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ঘরে প্রবেশের সময় দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য ও
সুরক্ষা চাওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। নিচে বিভিন্ন পরিস্থিতি অনুযায়ী ঘরে প্রবেশের
দোয়া বা দোয়ার আদব তুলে ধরা হলো:
১. সাধারণভাবে ঘরে প্রবেশের সময় (নিজের ঘরে)
দোয়া:
بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا
تَوَكَّلْنَا
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি
রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।
অর্থ: আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করি, আল্লাহর নামেই বের হই, এবং আমাদের প্রতিপালক
আল্লাহর ওপর আমরা ভরসা করি।
২. অন্ধকার ঘরে প্রবেশের সময়
দোয়ার পরামর্শ:
এমন ঘরে প্রবেশের আগে "বিসমিল্লাহ" বলা সুন্নাত।
ফল: শয়তান বা অপবিত্র কিছু হঠাৎ সামনে আসার আশঙ্কা কমে।
৩. পরের (অন্য কারো) ঘরে প্রবেশের সময়
কুরআনের আদব:
"তোমরা অন্যের ঘরে প্রবেশ করার আগে অনুমতি নাও ও সালাম দাও।"
সূরা আন-নূর, আয়াত: ২৭
দোয়া নয়, বরং করণীয়:
তিনবার অনুমতি চাওয়া
অনুমতি না পেলে ফিরে যাওয়া
চোখ নিচু রাখা
৪. ঘরে ঢুকে কেউ না থাকলে/একাকী হলে
সালাম দিন:
"আসসালামু আলাইনা ওয়া আ'লা ইবাদিল্লাহিস-সালিহীন।"
অর্থ: আমাদের প্রতি ও আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।
কারণ: কুরআনে বলা হয়েছে:
“নিজেদের প্রতি সালাম দাও” — (সূরা নূর: ৬১)
৫. দীর্ঘদিন পর ঘরে প্রবেশের সময়
দোয়ার পাশাপাশি করণীয়:
আলহামদুলিল্লাহ বলা
ঘরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
দু’রাকাত নফল সালাত (যদি সফর থেকে ফেরেন)
৬. বিপদগ্রস্ত অবস্থায় ঘরে প্রবেশের সময়
দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
(মূলত এটি টয়লেটের দোয়া হলেও, বিপদের সময়ও এই ধরণের আশ্রয় চাওয়া যায়।)
অথবা শুধু বলুন:
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
(আমি আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।)
সংক্ষেপে পরিস্থিতি অনুযায়ী করণীয়:
পরিস্থিতি করণীয় / দোয়া
সাধারণভাবে প্রবেশ বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা...
অন্ধকার ঘর বিসমিল্লাহ বলা
অন্যের ঘর অনুমতি ও সালাম
একা থাকলে নিজেকে সালাম দেওয়া
সফর শেষে আলহামদুলিল্লাহ, নফল নামাজ
বিপদের আশঙ্কায় আউজুবিল্লাহ বলা
ঘরে প্রবেশের দোয়া সম্পর্কিত ভুল ধারণা ও সঠিক ব্যাখ্যা
ঘরে প্রবেশের দোয়া সম্পর্কে অনেকের মাঝে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যেগুলো
ইসলামি জ্ঞানের আলোকে ঠিক নয়। নিচে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুল ধারণা এবং তার সঠিক
ব্যাখ্যা হাদিস ও কুরআনের আলোকে তুলে ধরা হলো:
ভুল ধারণা ও সঠিক ব্যাখ্যা
ভুল ধারণা ১:
“শুধু মসজিদ বা পবিত্র জায়গায় ঢোকার সময় দোয়া পড়তে হয়, ঘরে ঢোকার সময় দরকার নেই।”
সঠিক ব্যাখ্যা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম নিতে বলেছেন। হাদিসে আছে:
“যে ব্যক্তি ঘরে ঢোকে এবং আল্লাহর নাম নেয়, শয়তান বলে, ‘এখানে আমার কোনো থাকার
জায়গা নেই।’”
সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০১৮
অর্থাৎ, নিজের ঘরে ঢুকলেও দোয়া পড়া সুন্নাত ও সওয়াবের কাজ।
ভুল ধারণা ২:
“দোয়া না পড়লেও কিছু আসে যায় না।”
সঠিক ব্যাখ্যা:
ইসলাম সবকিছুতেই বরকতের জন্য আল্লাহর নাম নেওয়ার শিক্ষা দেয়। দোয়া না পড়লে:
শয়তান ঘরে প্রবেশ করে
পরিবারের মধ্যে অশান্তি হতে পারে
দোয়া পড়লে তা আত্মিক সুরক্ষা ও বরকতের কারণ।
ভুল ধারণা ৩:
“শুধু ঘরে ঢোকার সময় সালাম দিলেই যথেষ্ট, দোয়া পড়ার দরকার নেই।”
সঠিক ব্যাখ্যা:
সালাম দেওয়া ও দোয়া পড়া—দু’টোই আলাদা সুন্নাত।
সালাম হলো পরিবারকে শান্তি ও শুভেচ্ছা জানানোর উপায়
দোয়া হলো আল্লাহর নাম নিয়ে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকা ও বরকত চাওয়া
উভয়টিই করা উচিত।
ভুল ধারণা ৪:
“এই দোয়া শুধু আরবিতে পড়তে হবে, বাংলায় পড়লে হবে না।”
সঠিক ব্যাখ্যা:
আরবিতে দোয়া পড়া উত্তম, কারণ এটি নবীজির ভাষা। তবে কেউ মুখস্থ না থাকলে বাংলা
অনুবাদ অর্থ বুঝে পড়লেও আল্লাহ তা কবুল করেন। কিন্তু শিখে নেওয়ার চেষ্টা করা
উচিত।
ভুল ধারণা ৫:
“দোয়া কেবল রাতে ঢোকার সময় পড়তে হয়, দিনে নয়।”
সঠিক ব্যাখ্যা:
দোয়ার নির্দেশ সময়নির্বিশেষে — যেকোনো সময় ঘরে ঢোকার সময়।
দিন-রাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
উপসংহার:
ঘরে প্রবেশের দোয়া একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি নিয়ে প্রচলিত
ভুল ধারণা থেকে মুক্ত থেকে হাদিসসম্মতভাবে পালন করলে:
- শয়তান দূরে থাকে
- ঘর বরকতময় হয়
- সুন্নাত পালিত হয়
- পরিবারে শান্তি নেমে আসে
জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url