রথযাত্রার ইতিহাস কি জানেন? এখনি জানুন রথযাত্রা কেন করা হয় এবং রথযাত্রার ইতিহাস বিস্তারিত

রথযাত্রার ইতিহাস কি বা রথযাত্রা কেন করা হয় এসব বিষয় জানার জন্যই নিশ্চই গুগলে সার্চ করেছেন। এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানবেন রথযাত্রার ইতিহাস, রথযাত্রা ২০২৪ তারিখ, উল্টো রথযাত্রা কবে, রথযাত্রার শুভেচ্ছা, রথযাত্রার মাহাত্ম্য ইত্যাদি বিষয়গুলো। 

রথযাত্রার ইতিহাস কি জানেন। এখনি জানুন রথযাত্রা কেন করা হয় এবং রথযাত্রার ইতিহাস বিস্তারিত। জানবো আমরা। janbo amra
রথযাত্রার ইতিহাস কি জানেন? এখনি জানুন রথযাত্রা কেন করা হয় এবং রথযাত্রার ইতিহাস বিস্তারিত


রথযাত্রা কি

রথযাত্রা বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাসের এক অপূর্ব অধ্যায়। জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি অর্থাৎ গুন্ডিচা মন্দিরের তিন ভাই বোনের একসাথে যাওয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয় রথযাত্রা। তার সাতদিন পরে মাসির বাড়ি থেকে পোড়া পিঠে খেয়ে ফিরে আসার যে যাত্রা তাকে বলে উল্টো রথ।

ভারতবর্ষের পরিধাম রথযাত্রার জন্য বিখ্যাত। প্রতিবছর লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ পুরীতে যায় জগন্নাথ দেবের দর্শন পাওয়ার জন্য। প্রতিবছর রথযাত্রার সময় পুরীতে মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ে। রথ যাত্রার ইতিহাস বর্ণনা করলে দেখা যায় রথযাত্রার শুরু হয়েছিল সত্য যুগে।

সেই সময় উড়িষ্যা রাজ্যের নাম ছিল মালব দেশ। আর মালব দেশের রাজা ছিলেন অবন্তি নগরের ইন্দ্রেদুম্ন নামে সূর্যবংশীয় এক বিষ্ণু ভক্ত। তিনি স্বপ্নের মাধ্যমে ভগবান বিষ্ণুর এই জগন্নাথ রুপী মূর্তির রথ যাত্রার আদেশ পেয়েছিলেন।

পরবর্তীতে এ রাজা উড়িষ্যা রাজ্যের পুরীতে জগন্নাথ মন্দির স্থাপন করেন এবং সেখানে জগন্নাথ দেবের মূর্তি স্থাপন করেন এবং সেই সাথে রথযাত্রার অনুষ্ঠান প্রচলিত করেন।

তবে বর্তমান সময়ে এই রাজার রাজত্ব বা রাজ বংশের কেউ না থাকলেও এখনো ঠিক আগের মতই পুরীতে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

তিনটি বড় বড় কাঠের মন্দিরে করে সেখানে তিন ভাই বোন বড় ভাই বলরাম, ছোট বোন সুভদ্রা ও জগন্নাথ দেবকে বসিয়ে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করা হয় এবং রথের সম্মুখে সোনার ঝাঁটা দিয়ে ঝাড়ু দেওয়ার পর জগন্নাথ দেবের রথের দড়ি টানা হয়।

এই রথের দড়ি দুই থেকে তিন কিলোমিটার লম্বা হয়ে থাকে। তারপর শুরু হয় রথযাত্রা।রথযাত্রার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।

রথযাত্রা ২০২৪

রথযাত্রা বা রথদ্বিতীয়া আষাঢ় মাসে অনুষ্ঠিত হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব। ভারতের উড়িষ্যা, ঝারখান্ড,পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে এই উৎসব মহা ধুমধাম এর সাথে পালিত হয়। রথযাত্রা এমন একটি উৎসব যা উড়িষ্যা এবং সর্ব ভারতবর্ষের পালন করা হয়।

প্রত্যেক বছর রথ যাত্রার নির্দিষ্ট একটি দিন বা তারিখ থাকে সেই নির্দিষ্ট দিনেই পুরো ভারতবর্ষের একই সাথে রথ যাত্রার উৎসব পালন করা হয়। রথযাত্রা অনুষ্ঠানে তিনটি বড় বড় কাঠের মন্দির তৈরি করা হয় এবং দড়ির সাহায্যে রথ টানা হয়।

২০২৪ নতুন বছরে নতুন দিনে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখঃ
৭ই জুলাই, ২০২৪ রোজ রবিবার।এই দিনে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

উল্টো রথযাত্রা কবে ২০২৪

জেনে নিন উল্টো রথযাত্রা তারিখ ও সময়ঃ

ভারতবর্ষের পুরীতে এই রথযাত্রা দেখতে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষের আগমন ঘটে। সাত দিন পূর্বে রথযাত্রা উপলক্ষে জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি অর্থাৎ গুন্ডিচা মন্দিরের নিয়ে যাওয়া হয়। আর সাত দিন পরে এই উল্টো রথ অর্থাৎ গুন্ডিচা মন্দির থেকে নীলাচলের জগন্নাথ দেবকে মন্দিরে নিয়ে আসা কে উল্টোরথ বলে।
এই বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে উল্টোরথ অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখঃ

১৫ জুলাই, ২০২৪ রোজ সোমবার। এই দিনে উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে জগন্নাথ দেব হলেন জগতের অধীশ্বর। জগৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হলেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ দেব হলেন জগতের ঈশ্বর।। জগন্নাথ দেবের উপর বিশ্বাস রেখে তার মূর্তি স্থাপন করে প্রত্যেক বছর রথযাত্রা পালন করা হয়।

রথে কে কে থাকে

রথযাত্রার ইতিহাস পড়লেই জানা যায় রথে কে কে থাকে। রাতে থেকে জগন্নাথ, বড় ভাই বলরাম এবং ছোট বোন সুভদ্রা। তিনজনের জন্য আলাদা আলাদা রথ রয়েছে। জগন্নাথ দেবের রথের যে চাকা আছে সেটি ১৮টি। বড় ভাই বলরামের রথের চাকা ১৬টি এবং ছোট বোন সুভদ্রার রথের চাকা ১২টি।

কিভাবে রথ তৈরি করা হয়

জগন্নাথ দেবের রথ তৈরি করা কোন সহজ কথা নয়। রথ তৈরি করার সময় কারিগরদের অনেক নিয়ম মানতে হয়। রথ তৈরি করার সময় রথের চাকায় কোনরকম পেরেক মারা যাবে না। রথ যতদিন না তৈরি হবে ততদিন কারিগরদের পুরীতেই থাকতে হবে।

কারিগরদের একবারে মম চর্চা জীবনযাপন করতে হয়। এই সময় কোন রকম আমিষ খাবার খাওয়া যাবেনা। রথ তৈরীর সময় যদি কোন কারিগর আঘাত পায় তাহলে তিনি আর রথ তৈরি করতে পারবেন না। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শুরু হয় জগন্নাথ দেবের রথ তৈরির কাজ।

রথ তৈরির জন্য যে গাছের প্রয়োজন সেটির জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষ বন বিভাগের কাছে একটি চিঠি পাঠান। তারপর গাছ নির্ধারণ করে পুরোহিতরা সেই গাছ পুজো করেন। জগন্নাথ দেবের চরণে ছুয়ে আনা সোনার কুড়োল দিয়ে গাছের গুড়ি কাটা হয়।

জগন্নাথ দেবের রথের দড়ির নাম কি

জগন্নাথ দেবের রথের দড়ির নাম শঙ্খচুদা নাগিনী। স্নানযাত্রা যাত্রার পর জগন্নাথ দেব অসুস্থ হয়ে যান। সুস্থ হয়ে ওঠার পরে তিনি মাসির বাড়িতে যান বিশ্রাম নিতে। এই যাত্রাকে বলা হয় রথযাত্রা। জগন্নাথ দেব যে রথে করে মাসির বাড়ি জান তার নাম নন্দী ঘোষ।

এই রাত টির মোট ১৬ টি চাকা। আর সেই রথের চাকার নাম দারুক। প্রতিটি চাকার পরিধির ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি।মোট ৮৩২টি কাঠের টুকরা দিয়ে রটি তৈরি করা হয়। জগন্নাথ দেবের রথের উচ্চতা ৪৫ ফুট। রথ তৈরি করতে সময় লাগে দুই মাস।

জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা কেন হয়

জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার মহা উৎসব ভগবান জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথিতে স্মরণীয় করে রাখার জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ দেবের এক বিশেষ চানযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

স্কন্ধ পুরান অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিদ্রোহ প্রতিষ্ঠা করেন তখন থেকে এই চানযাত্রার উৎসব শুরু হয়। চান যাত্রার উৎসবটি জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি বা জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়।

পুরীর মন্দির প্রাঙ্গণে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় এক মন্ডপ যাকে বলা হয় স্নান মন্ডপ। এটা এত উঁচু যে মন্দির প্রাঙ্গণের বাহির থেকেও সম্পূর্ণটি দেখা যায়। পুরীতে স্নানের জন্য সোনার তৈরি এক ধরনের কুয়া থেকে জল আনা হয়।

জল আনার সময় পুরোহিতেরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন যাতে জলে তাদের মুখ নিঃসৃত কোনো কিছু দ্বারা এমনকি তাদের নিঃশ্বাস দাঁড়াও দূষিত না হয়। অভিষেকের সময় দৈবিক মন্ত্র উচ্চারণ কীর্তন এবং শঙ্খ বাজানো হয়।

প্রাণ যাত্রার পর ১৫ দিন ভগবানকে জনসাধারণের থেকে দূরে রাখা হয়। এই ১৫ দিন মন্দিরে কোন অনুষ্ঠান করা নিষেধ। ১৬ তম দিনে জগন্নাথ দেব কে আবার সবার দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

জগন্নাথ পূজা কেন করা হয়

জগন্নাথ কে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত করা হয়ে থাকে। পুরানে বর্ণিত আছে, বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার কাঠের স্তম্ভ ভেঙ্গে বেরিয়েছিলেন। তাই জগন্নাথকে দারু ব্রহ্ম রূপে নৃসিংহ স্তোত্র পাঠ করে পূজা করা হয়।

জগন্নাথ অর্থ জগতের নাথ বা জগতের প্রভু। ভারতের উড়িষ্যা, ঝারখান্ড, বিহার, আসাম, মনিপুর, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের জগন্নাথ দেবের পূজা করা হয়। জগন্নাথ দেব হলেন বিষ্ণুর একটি রূপ। জগন্নাথ দেবের সাথে বলরাম ও সুভদ্রারও করা হয়।

প্রতিবছর জগন্নাথ কে বিষ্ণুর বামন অবতারের বেশে পূজা করা হয়। একটি প্রচলিত কথা রয়েছে, ভক্তদের খুশি করার জন্য জগন্নাথ যে কোন সময় যেকোনো রূপ ধারণ করতে পারেন। জগন্নাথ দেবের পূজা করলে ভক্তের মনের আশা পূরণ হয়। রক্ত সুখ ও সমৃদ্ধির সাথে জীবন যাপন করতে পারে।

জগন্নাথ মন্দিরের ইতিহাস

জগন্নাথ মন্দিরের তৈরির ইতিহাস নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। এটি দ্বিতীয় অনঙ্গভীম দেব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিভিন্ন ইতিহাসে বিভিন্নভাবে ১১৯৬, ১১৯৭, ১২০৫, ১২১৬ বা ১২২৬ হিসেবে নির্মাণের বছর উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু এটি থেকে বোঝা যায় যে মন্দিরের নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছিল বা মন্দিরটি নিয়মিত হয়েছিল অনন্তবর্মনের পুত্র অনঙ্গভীমার রাজত্বকা। পুরী জগন্নাথ মন্দির হল হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির।

এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণর একটি রূপ জগন্নাথ কে উৎসর্গ করা হয়েছে। পরি ভারতবর্ষের পূর্ব উপকূলে উড়িষ্যা রাজ্যে অবস্থিত। অবন্তীর সোম বংশের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন পুরীতে ভগবান জগন্নাথের মন্দিরটি নির্মাণ করেছেন।

পুরীর জগন্নাথ মন্দির টি হিন্দুদের একটি তীর্থক্ষেত্র। এটিকে চার ধামের অন্যতম একটি ধাম হিসেবে মানা হয়।

সুভদ্রার রথের রশির নাম কি

সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন।সুভদ্রার রথটির উচ্চতা প্রায় ৪৩ ফুট। এই রথের মোট ১২টি চাকা রয়েছে।তাই সুভদ্রার রথটিকে পদ্মধ্বজও বলা হয়ে থাকে। এই রথের আবরণের রং লাল। সুভদ্রার রথের দড়ির নাম স্বর্ণচূড়া নাগিনী।

বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা রথ কোনটি

রথযাত্রার মূলত প্রত্যেক বছর বিভিন্ন দেশে পালিত হয়। কিন্তু আপনারা কি জানেন বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা রথ কোনটি? বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা রথ হল নন্দী ঘোষ। তিরুভারুর মন্দিরের গাড়ি বিশ্বের বৃহত্তম (রথ) মন্দিরের গাড়ি। এটির ওজন ৩০০ টন (২৯৫ দীর্ঘটন ;এবং ৩৩১ ছোট টন) যার উচ্চতা ৯০ ফুট (২৭.৪৩ মিটার)।

রথযাত্রা রশ্মির নাম কি

রথ যাত্রার রথের রশির নাম বাসুকি। জগন্নাথ দেবের রথের রশ্মি একটিবার স্পর্শ করার জন্য ভক্তরা আকুল হয়ে থাকেন। এক সময় পুরীর রথযাত্রায় জগন্নাথ দেবের রশির ছুঁয়েই সেই রথের চাকা তলায় আত্মঘাতী হতো কোন কোন ভক্ত।

কেন এই অদ্ভুত মৃত্যুবরণ? অনেকেই বিশ্বাস করেন শ্রীপুরুষোত্তমের চাকায় পড়ে নিজের পান উৎসর্গ করলে সমস্ত পাপ দূর হয়ে যাবে। রথের রশ্মি স্পর্শ করলে পাপ মোচন হয়।

রথযাত্রা কেন করা হয়

রথযাত্রা হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য একটি বিশেষ দিন। রথযাত্রার ইতিহাস বর্ণনা করলে জানা যাবে রথযাত্রা কেন করা হয়। হিন্দু ধর্মের অন্যান্য দেবতাদের মূর্তি বা প্রতিমার সঙ্গে জগন্নাথ বিদ্রোহের বিশাল পার্থক্য রয়েছে।

দেবতার বিগ্রহ সাধারণত আমরা সোনা রুপা তামা কিংবা বিভিন্ন রকম ধাতু দিয়ে তৈরি করে থাকি। কিন্তু জগন্নাথ দেবের মূর্তি তৈরি করা হয়েছে নিম গাছের কাঠ থেকে।জগন্নাথ দেবের বিগ্রহের আকার ও বৈচিত্র্। চৌকো মাথা বড় বড় চোখ এবং অসম্পূর্ণ হাত।

জগন্নাথ দেবের অসম্পূর্ণ হাতের পেছনে একটি কাহিনী আছে। বলা হয় জগন্নাথ দেব বিষ্ণুর আরেকটি রূপ। বিশ্বাস করা হয় রাজা ইন্দ্রদুম্ন ভগবান বিষ্ণুর মন্দির তৈরি করতে চেয়েছিলে। কিন্তু বির কেমন আকার বা আকৃতি দেবেন সেটা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না।

তখন রাজা ব্রহ্মার নিকট গিয়ে সমস্যার কথা খুলে বলেন। ব্রহ্মা রাজাকে শ্রীবিষ্ণুর ধ্যান করতে বলেন এবং তার কাছ থেকে জেনে নিতে বলেন। তখন শ্রীবিষ্ণু তার ধ্যানে মুগ্ধ হয়ে স্বপ্নে এসে রাজাকে আদেশ করেন পুরীর কাছে একটি নদীতে একটি নিম কাঠের টুকরো ভেসে যাচ্ছে।

সেই কার্ড দেই তৈরি করতে হবে বিগ্রহ। রাজার দ্রুত সেখানে গিয়ে চারটি সংগ্রহ করেন। তারপর রাজা বিশ্বকর্মা সাহায্যে কাঠি দিয়ে বিগ্রহ তৈরির কাজ শুরু করেন। কিন্তু বিশ্বকর্মার একটি শর্ত ছিল যে,তিনি যতক্ষণ কাজ করবেন তাকে কোনরকম বিরক্ত করা চলবে না।

রাজাও সেই শর্তে রাজি হয়ে যান। কর্মা একটি বদ্ধ ঘরে বিগ্রহ তৈরির কাজ শুরু করে। দুই সপ্তাহ পরে হঠাৎ করে ওই বদ্ধ ঘর থেকে কোন রকমের আওয়াজ আসছিল না। আজা চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং স্ত্রীর কথায় সেই বদ্ধঘরের দরজা খুলে ফেলেন।

রাজা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে দেখেন সেখানে কোন কারিগর নেই ঘরের মধ্যে শুধু একটিমাত্র অসম্পূর্ণ বিগ্রহ রয়েছে।রাজা বিশ্বকর্মার আদেশ অমান্য করেন।তখন ভগবান বিষ্ণুদৈববাণী করেন যে আকৃতির বিদ্রোহ হয়েছে সেই বিগ্র টি স্থাপন করা হোক।

রাজা তখন বিষ্ণুর বাণী শুনে সেই বিগ্রহটি স্থাপন করেন। সেই থেকেই জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রার অসম্পূর্ণ বিগ্রহের মাহাত্ম্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই রথযাত্রা শুরু হয়।

রথযাত্রার মাহাত্ম্য

জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার মাহাত্ম্য অপার।আমরা সকলেই কমবেশি রথযাত্রা সম্পর্কে জানি। কিন্তু আমরা রথযাত্রার মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানি কি? রথ যাত্রার পাশাপাশি আমাদের রথযাত্রার মাহাত্ম্য সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন।

রথ যাত্রার পেছনে বিশাল এক মাহাত্ম্য রয়েছে। আপনারা যারা রথ যাত্রার মাহাত্ম্য জানেন না এবং যারা রথ যাত্রার মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক এই অনুচ্ছেদটি তাদের জন্য।
  • রথ টানলে মেলে অনেক উপকার 
  • রথের দড়ি স্পর্শ করলে পাপের মোচন ঘটে 
  • রথ দেখলে আধ্যাত্মিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায় 
রথে করে প্রভু জগন্নাথ প্রভু বলরাম ও দেবী সুভদ্রার জান মাসির বাড়ি। অনেকে বিশ্বাস করেন রথ দেখলে আধ্যাত্মিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। রথের দড়ি স্পর্শ করলে পাপের মোচন ঘটে। রথএ টানলে মেলে অনেক উপকার।

রথ যাত্রার মাহাত্ম্য অন্যঅন্য কিছু থেকে। রথ যাত্রার দিনে কোন কাজ করলে জীবনে সমৃদ্ধি মেলে। রথযাত্রার দিনে বাড়িতে যে কোনো শুভ কাজ করা যেতে পারে। যেকোনো কাজ নিজের মন মত বা ফলপ্রসু হয়।

শাস্ত্রে আছে 'রথস্হ বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে'।অর্থাৎ রথের উপর খর্বাকৃতির বামন শ্রী শ্রী জগন্নাথকে দর্শন করলে তার পুনর্জন্ম হয় ন। এ বিশ্বাস মনে স্থাপন করে ভোর রাত থেকে হাজার হাজার ভক্তরা জগন্নাথ দেব কে দর্শন করার জন্য পুরীতে ভিড় জমায়।

ভক্তরা রথের দড়ি টানে। সেই সঙ্গে সমান তালে বাঁচতে থাকে ঘন্টার ধ্বন। একদিকে পুরুষেরা শঙ্খ, ঘন্ট, কাসা, ঢাক, ঢোল বাজিয়ে মুখরিত করে অন্যদিকে মহিলারা উলুধ্বনি ও মঙ্গল ধ্বনির মাধ্যমে রথযাত্রার আনন্দ করে।

রথযাত্রার তাৎপর্য

রথযাত্রার ইতিহাস প্রাচীন পৌরাণিক গ্রন্থে খুঁজে পাওয়া যায়। পুরানে বর্ণিত রয়েছে, আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়ায় বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে জগন্নাথ মাসির বাড়ি অর্থাৎ ইন্দ্রদ্যুম্নের পত্নী গুন্ডিচার বাড়িতে বেড়াতে যান।

আবার সেখান থেকে সুসজ্জিত রথে চেপে সাতদিন পরে বাড়ি ফিরে আসেন। রথ যাত্রার ইতিহাসে রথযাত্রার তাৎপর্য সম্পর্কেও জানা যায়।

আধ্যাত্মিক যাত্রাঃ

রথ দেখলে আধ্যাত্মিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।দেবতারা যখন এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে চলে যান, এটি তাদের আধ্যাত্মিক রাজ্য থেকে পার্থিব রাজ্যে তাদের যাত্রাকে প্রতিনিধিত্ব করে।

রথযাত্রা দেখলে ভক্তদের নিজস্ব আধ্যাত্মিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। রথযাত্রা মূলত ভক্তদের নিজস্ব আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু করতে এবং ঐশ্বরিকের মিলনের জন্য প্রচেষ্টা মনে করিয়ে দেয়।

সাম্য ও ঐক্যঃ

শোভাযাত্রা সময় জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষ রথের দড়ি টানতে পারে। ভক্তরা মনে করেন রথের দড়ি টানলে পাপ মোচন হয়। রথযাত্রার সাম্য ও ওইকে তাৎপর্য বহন করে।

মূলত এটি দ্বারা বোঝায় যে সমস্ত ভক্ত তাদের সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সমান। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে জাতি ধর্ম-বর্ণ বলে কোন ভেদাভেদ নেই। আমরা সকলেই ঈশ্বরের সৃষ্টি।

সাংস্কৃতিক উদযাপনঃ

সনাতন ধর্মালম্বী মানুষেরা রথযাত্রাকে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলে মনে করেন না বরং এটি একটি প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রথযাত্রা উৎসবটি সকল অঞ্চলের ঐতিহ্য প্রদর্শন করে। রথযাত্রা অনুষ্ঠানের সময় রাস্তাঘাট সুসজ্জিত করা হয়।

এর পাশাপাশি সংগীত, নিত্যের ও আয়োজন করা হয়। এজন্য সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক রথ যাত্রার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন।

ধর্মীয় ভক্তিঃ

সনাতন ধর্মালম্বী মানুষেরা মনে করেন রথ টানা একটি অত্যন্ত শুভ কাজ। রথযাত্রা হল হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষদের কাছে জগন্নাথ দেবের পতি তাদের গভীর ভক্তি ও ভালোবাসার একটি প্রকাশমাধ্যম।

ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে রথ যাত্রার এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করলে দেবদেবীরা তাদের ওপর সন্তুষ্ট হবেন এবং আশীর্বাদ করবেন। তারা এটাও মনে করেন এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শুদ্ধি আস।

সামগ্রিকভাবে বলা যায় রথযাত্রার ভক্ত এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে অপরিসীম তাৎপর্য রাখে। শোভাযাত্রার মধ্যে জাতি বর্ণ ধর্ম কোন ভেদাভেদ থাকে না। এটি গভীর ভক্তি আধ্যাত্মিক প্রতিফলন ঐক্য এবং সংস্কৃতির ঐতিহ্য উদযাপনের একটি মুহূর্ত।

এই উৎসবটি যদিও সনাতন ধর্মালম্বী মানুষদের জন্য কিন্তু এই উৎসবের সময় সকল ধর্মের মানুষ আনন্দ করে থাকেন।

রথযাত্রা স্ট্যাটাস - রথযাত্রার শুভেচ্ছা বার্তা

আমরা রথযাত্রার ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেই জানি।কিন্তু আপনারা কি জানেন আপনাদের আত্মীয়-স্বজনদের ও বন্ধুবান্ধবদের রথযাত্রার স্ট্যাটাস বা শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে রথযাত্রার নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন।

আপনি যদি রথযাত্রার শুভেচ্ছা বার্তা, স্ট্যাটাস, উক্তি খুঁজে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আপনি নিজের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের ও নিজের কাছের মানুষদের স্ট্যাটাসের মাধ্যমে খুব সুন্দর ভাবে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন।

রথযাত্রার উৎসব পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমাবেশের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় পুরীর জগন্নাথ ধামে। ভারতবর্ষের মধ্যে পুরীর রথযাত্রা খুবই বিখ্যাত। এছাড়াও ভারত এবং বাংলাদেশে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রথযাত্রার অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে।

রথ যাত্রার অনুষ্ঠান পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে ইসকন ব্যাপক হারে প্রচারিত করেছে।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুনরায় বৃন্দাবন প্রবর্তনের উপলক্ষে হিন্দু ধর্মালম্বী ভক্তবৃন্দরা রথযাত্রা উদযাপন করে। রথযাত্রা আষাঢ় মাসে নির্দিষ্ট একটি তিথিতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে এই অনুষ্ঠানটির অনুষ্ঠিত হয়।

রথযাত্রার স্ট্যাটাস

১।
রথযাত্রার পূর্ণ তিথিতে করুণা সিন্ধুর কাছে করজোরে 
প্রার্থনা যেন প্রভু মিটিয়ে দেন সবার মনের সাধ, 
দূর করেন সকল অবসাদ।।

২।
রথ যাত্রার মত আনন্দময়
হোক প্রতিটি দিন।
সুন্দর হোক তোমার জীবন,
পূরণ হোক মনে সব চাওয়া পাওয়া
শুভ রথযাত্রা।।

৩।
"হে প্রভু সকলকে তুমি কৃপা কর 
দিও তোমার অফুরন্ত আশীর্বাদ"
"শুভ রথযাত্রা "

৪।
পবিত্র রথযাত্রা উপলক্ষে সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা,  অভিনন্দন ও ভালোবাসা। 
রথের দড়ির টান ও রথের চাকার ঘূর্ণনের সাথে সাথে আপনার ভাগ্যের চাকা ও ধাবমান হোক সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে,,, জয় জগন্নাথ!!! 

৫।
নীলাচলে নীলমাধব প্রভু জগন্নাথ 
ভক্ত জনে কৃপা করো দাও গো আশীর্বাদ 
প্রভু আছেন তাই তো ধন্য হয়েছে পুরী ধাম 
প্রভু সাথে আছে সুভদ্রা আর বলরাম 
করুণার সিন্ধু তুমি প্রভু মেটাও সবার স্বাদ 
সকলকে তুমি কৃপা করো দাও আশীর্বাদ 
"শুভ রথযাত্রা "!!!

রথযাত্রার উক্তি 

১।
"জগন্নাথ স্বামী নয়ন পথগামী ভবতু মে" ~শুভ রথযাত্রার
 পূর্ণ লগ্নে সকলকে জানাই আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জয় জগন্নাথ।।

২।
জগন্নাথ দেব আপনাকে শুভ সময় ও সমৃদ্ধি প্রদান করুন, সুস্বাস্থ্য বজায় থাকুক আপনার পরিবারের!! জয় রথযাত্রা!!

৩।
রথ যাত্রার  এই শুভ দিনটিতে আপনার জীবনে আসুক 
অনাবিল সৌভাগ্য, সুখ এবং প্রাচুর্য। শ্রী জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার আশীর্বাদে আপনার জীবন হয়ে উঠুক বর্ণময় এবং সমৃদ্ধ। 
শুভ রথযাত্রা !!জয় জগন্নাথ!!! 

৪।
জগন্নাথ দেবের কৃপায় যেন সকলে সুস্বাস্থ্য, সুখ ও সমৃদ্ধি 
বজায় থাকে। তার আশীর্বাদ যেন নিরন্তন ঝরে 
পরে মানবজাতির ওপর !!ঈশ্বরের কাছে এই কামনা এবং প্রার্থনা!! 
শুভ রথযাত্রা!! 

৫।
মহাপ্রভু জগন্নাথ আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে রথ যাত্রার এই পবিত্র দিনটিতে আনন্দে ও সুখে ভরিয়ে তুলুন। 
সফল হোক আপনার সমস্ত মনস্কামনা। 
শুভ রথযাত্রার আন্তরিক প্রীতি ,শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।।

উল্টো রথযাত্রার শুভেচ্ছা 

রথ যাত্রার সাতদিন পরে আসে উল্টোরথ।মাসির বাড়ি থেকে জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রা বাড়ি ফেরে। রথযাত্রা শুভেচ্ছা তো সকলকে জানানো হয় কিন্তু উল্টো রথযাত্রা শুভেচ্ছা কি সকলকে জানানো হয়? আপনি কি আপনার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের উল্টো  রথযাত্রা শুভেচ্ছা জানাতে চান,,তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।। 



উল্টো রথ যাত্রার পবিত্র উৎসবে ভগবান জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার আশীর্বাদে জীবন হয়ে উঠুক আনন্দময়।। এইবার এই বিশেষ দিনে সকলকে জানান শুভেচ্ছা।। 

১।
সুন্দর হোক জীবন পূরণ হোক মনের কামনা 
উল্টো রথযাত্রায় শুভদিনে জানাই সকলকে শুভেচ্ছা।। 

২।
মুক্তিদাতা ভগবান জগন্নাথ
 ভাগ্যবিধাতা ভগবান জগন্নাথ 
জগন্নাথ দেবের উল্টো রথযাত্রায় জানাই শুভেচ্ছা 

৩।
ভগবান জগন্নাথ আপনার 
সকল মনের আশা পূরণ করুক 
শুভ উল্টো রথযাত্রা।। 

৪।
আজ উল্টো রথ দেখতে 
দেখতে কেটে গেল একটা সপ্তাহ 
এগিয়ে এলো দিন 
পেরিয়ে গেল সময়
 রইল উল্টো রথের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।। 

৫।
উল্টো রথ প্রভু জগন্নাথের ফিরে আসা দিন
এই দিন কাটুক আনন্দে 
শুভ উল্টো রথযাত্রা।। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url