চার রাকাত ফরজ নামাজে সুরা পড়ার নিয়ম ও সূরা মিলানোর নিয়ম জানুন
চার রাকাত ফরজ নামাজে সুরা পড়ার নিয়ম ও ফজরের ফরজ
নামাজের পর সুন্নত পড়া যাবে কিনা , সম্পর্কে আরও বিস্তারিত
জানতে আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়ুন।
![]() |
চার রাকাত ফরজ নামাজে সুরা পড়ার নিয়ম |
চার রাকাত ফরজ নামাজে সুরা পড়ার নিয়ম জানার পাশাপাশি ফরজ নামাজে কোন কোন সূরা পড়তে হয় নিয়ম জানতে পারবেন।
সূচীপত্র ঃ চার রাকাত ফরজ নামাজে সুরা পড়ার নিয়ম
চার রাকাত ফরজ নামাজে সুরা পড়ার নিয়ম
চার রাকাত ফরজ নামাজে (যেমন যোহর, আসর, এশা) সুরা পড়ার নিয়ম হলো নিম্নরূপ:
ইমামের জন্য (জামাতে নামাজ পড়ালে):
১. প্রথম রাকাত:
তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার)
সানা (সুবহানাকাল্লাহুম্মা...)
তাঊয (আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম)
বিসমিল্লাহ (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম)
সূরা ফাতিহা
ফাতিহার পরে যেকোনো কুরআনের ছোট একটি সূরা বা কয়েকটি আয়াত
২. দ্বিতীয় রাকাত:
সূরা ফাতিহা
ফাতিহার পরে যেকোনো কুরআনের সূরা বা আয়াত
৩. তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত:
কেবল সূরা ফাতিহা (আর কোনো সূরা পড়া সুন্নত নয়)
নোট: যোহর ও আসরের নামাজে ইমাম জোরে কিরাত করেন না (চুপচাপ পড়েন)। এশার
নামাজে প্রথম দুই রাকাতে জোরে কিরাত করেন, আর পরের দুই রাকাতে চুপচাপ।
একা নামাজ পড়লে (মুসল্লি একা পড়ছেন):
একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে:
প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা,
শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা।
ফরজ নামাজে সুরা পড়ার নিয়ম
ফরজ নামাজে সূরা পড়ার নিয়ম প্রতিটি নামাজের রাকাত অনুযায়ী কিছুটা ভিন্ন হয়।
নিচে সংক্ষেপে দেওয়া হলো:
২ রাকাত ফরজ নামাজ (ফজর):
১ম রাকাত: সূরা ফাতিহা + অন্য যেকোনো সূরা বা কুরআনের কয়েকটি আয়াত
২য় রাকাত: সূরা ফাতিহা + অন্য যেকোনো সূরা বা আয়াত
(ফজরের নামাজে ইমাম বা একা পড়লে উচ্চ স্বরে কিরাত হয়)
৩ রাকাত ফরজ নামাজ (মাগরিব):
১ম ও ২য় রাকাত: সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা
৩য় রাকাত: কেবল সূরা ফাতিহা
(১ম ও ২য় রাকাতে উচ্চ স্বরে কিরাত, ৩য় রাকাতে চুপচাপ)
৪ রাকাত ফরজ নামাজ (যোহর, আসর, এশা):
১ম ও ২য় রাকাত: সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা
৩য় ও ৪র্থ রাকাত: কেবল সূরা ফাতিহা
নোটস:
যোহর ও আসরে সব রাকাতে চুপচাপ কিরাত (সাইলেন্ট),
এশায় ১ম ও ২য় রাকাতে উচ্চ স্বরে, ৩য় ও ৪র্থ রাকাতে চুপচাপ।
ফজরের ফরজ নামাজের পর সুন্নত পড়া যাবে কিনা
ফজরের ফরজ নামাজের পর সুন্নত নামাজ পড়া যাবে না — এটি ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী
নিষেধ (মাকরূহ তাহরিমি)।
ব্যাখ্যা:
ফজরের ফরজ নামাজের আগে ২ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া সুন্নতে মু’আক্কাদা (অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত)।
তবে ফরজ নামাজের পর কোনো সুন্নত বা নফল নামাজ পড়া নিষেধ, যতক্ষণ না সূর্য উঠে
যায় (প্রায় ১৫–২০ মিনিট পর)।
যদি কেউ ফজরের ২ রাকাত সুন্নত না পড়ে থাকে:
এবং জামাত শুরু হয়ে যায়, তাহলে ফরজ পড়ে নেওয়ার পর সূর্য ওঠার পর সে এই সুন্নত
কাযা করতে পারে।
জুমার ফরজ নামাজের আগে ও পরে সুন্নাত কত রাকাত
জুমার নামাজের আগে ও পরে সুন্নাত নামাজের সংখ্যা সম্পর্কে ইসলামী শরিয়তে
সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
জুমার ফরজ নামাজের আগে সুন্নাত:
সংখ্যা: ৪ রাকাত সুন্নত মু’আক্কাদা (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত)।
প্রমাণ: হাদিসে এসেছে, সাহাবায়ে কেরাম জুমার আগে ৪ রাকাত সুন্নাত পড়তেন।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জুমার আগে ৪ রাকাত সুন্নাত পড়ার নির্দেশ দিতেন।
বিস্তারিত: জুমার ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করা সুন্নতে
মু’আক্কাদা। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নিয়মিত আদায় করা উচিত।
জুমার ফরজ নামাজের পরে সুন্নাত:
সংখ্যা: ৪ রাকাত সুন্নত মু’আক্কাদা (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত)।
প্রমাণ: হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের কেউ যখন জুমার ফরজ পড়ে,
তখন সে যেন জুমার পর ৪ রাকাত সুন্নাত পড়ে নেয়।"
বিস্তারিত: জুমার ফরজ নামাজের পর ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করা সুন্নতে
মু’আক্কাদা। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নিয়মিত আদায় করা উচিত।
মোট সুন্নাত রাকাত:
মোট সংখ্যা: ৮ রাকাত সুন্নাত মু’আক্কাদা (৪ রাকাত আগে, ৪ রাকাত পরে)।
উল্লেখযোগ্য: এই ৮ রাকাত সুন্নাত নামাজ নিয়মিত আদায় করা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
অতিরিক্ত সুন্নাত:
বাদাল জুমা: জুমার ফরজ নামাজের পর বাড়িতে গিয়ে ২ রাকাত সুন্নাত পড়া সুন্নত।
রাসুল (সা.) জুমার পর বাড়িতে গিয়ে ২ রাকাত সুন্নাত পড়তেন।
মনে রাখবেন:
খুতবা চলাকালে: ইমাম খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করলে কেবল ২
রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ (দ্বার-নমাজ) পড়বেন। এরপর খুতবা শুনবেন এবং ফরজ নামাজ
আদায় করবেন।
জুমার ফরজ: জুমার ফরজ নামাজ দুই রাকাত।
ফরজ নামাজে সূরা মিলানোর নিয়ম
ফরজ নামাজে সূরা মিলানোর নিয়ম (সূরা ফাতিহার পর কুরআনের অন্য সূরা বা আয়াত
পড়া) ইসলামী শরিয়তের নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী করা উচিত। নিচে বিস্তারিত দেওয়া
হলো:
১. সূরা ফাতিহার পর সূরা মিলানো (সূরা সংযুক্ত করা) — কখন?
প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে:
ফরজ নামাজে কেবল প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য কোনো সূরা বা আয়াত
মিলানো সুন্নত।
তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে:
কেবল সূরা ফাতিহা পড়া যথেষ্ট, অতিরিক্ত সূরা মিলানো প্রয়োজন নেই।
২. সূরা মিলানোর নিয়ম:
ক্রম অনুযায়ী মিলানো সুন্নত
যেমন:
১ম রাকাতে: সূরা ফিল
২য় রাকাতে: সূরা কুরাইশ
(অর্থাৎ কুরআনের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী পরবর্তী সূরা পড়া উত্তম)
পেছনের সূরা আগে পড়া মাকরূহ (অপছন্দনীয়)
উদাহরণ:
১ম রাকাতে সূরা নাস
২য় রাকাতে সূরা ফালাক
(এটি সুন্নতের বিরুদ্ধ; ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার করলে গুনাহ হতে পারে)
একই সূরা দুই রাকাতে পড়া জায়েয, তবে উত্তম নয়
প্রয়োজনে করা যায়, কিন্তু বারবার না করা উত্তম।
৩. ছোট সূরা মেলানোর ক্ষেত্রে:
ছোট সূরাগুলো একাধিকও মিলানো যায়। যেমন:
সূরা ফাতিহার পর সূরা কাউসার ও সূরা নাসর একসাথে পড়া।
৪. ভুলক্রমে সূরা উল্টে পড়লে:
ভুল হয়ে গেলে নামাজ সহীহ হয়, তবে সুন্নতের খিলাফ হয়। ইচ্ছাকৃত না হলে গুনাহ
নেই।
ফরজ নামাজে কোন কোন সূরা পড়তে হয়
ফরজ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়—এটি নির্দিষ্টভাবে বাধ্যতামূলক নয় যে একটি
নির্দিষ্ট সূরাই পড়তে হবে। তবে কিছু সাধারণ নিয়ম ও সুন্নাত অনুসারে যেকোনো
কুরআনের সূরা বা আয়াত ফাতিহার পর মিলানো যায়।
ফরজ নামাজে সূরা পড়ার মূল নিয়ম:
১. প্রতিটি নামাজের প্রথম দুই রাকাতে:
সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ বা রুকন।
এরপর কুরআনের যেকোনো সূরা বা আয়াত মিলানো সুন্নত।
২. শেষের রাকাতগুলোতে (৩য় ও ৪র্থ):
শুধু সূরা ফাতিহা পড়া যথেষ্ট। সূরা মিলানো আবশ্যক নয়।
যেসব ছোট সূরা বেশি পড়া হয় (সহজ ও মাসনূন):
১. সূরা ইখলাস (قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ)
২. সূরা ফালাক (قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلْفَلَقِ)
৩. সূরা নাস (قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ)
৪. সূরা কাওসার (إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ ٱلْكَوْثَرَ)
৫. সূরা মাউন, আসর, কুরাইশ, ফীল – ইত্যাদি ছোট সূরাগুলো সহজে মুখস্থ ও পড়তে
সুবিধাজনক।
উত্তম নিয়ম (সুন্নত অনুযায়ী):
১ম রাকাতে আগে কুরআনে যেটি আছে তা আগে পড়া।
২য় রাকাতে তার পরে থাকা সূরা পড়া। উদাহরণ:
১ম রাকাতে: সূরা ফীল
২য় রাকাতে: সূরা কুরাইশ
সারাংশ:
রাকাত পড়তে হবে
১ম সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা
২য় সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা
৩য়/৪র্থ কেবল সূরা ফাতিহা
ফরজ নামাজের শেষ দুই রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার হুকুম কি
ফরজ নামাজের শেষ দুই রাকাতে (যেমন: যোহর, আসর, এশা, মাগরিব-এর ৩য় রাকাত) সূরা
ফাতিহা পড়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। তবে এর পরে অন্য কোনো সূরা মিলানো সুন্নত নয় —
বরং তা না পড়াই সুন্নত।
হানাফি মাযহাব অনুযায়ী (সর্বাধিক অনুসৃত মতে):
৩য় ও ৪র্থ রাকাত:
কেবল সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব।
অতিরিক্ত সূরা (যেমন সূরা ইখলাস, ফালাক) মিলানো মাকরূহ (অপছন্দনীয়)।
সারাংশ:
রাকাত কী পড়বেন সূরা মিলাবেন কিনা
৩য় ও ৪র্থ রাকাত কেবল সূরা ফাতিহা না
দলীল (প্রমাণ):
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“তোমরা প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ো...”
(সহীহ মুসলিম)
এবং সাহাবিদের বর্ণনা অনুযায়ী, রাসুল (সা.) শেষ রাকাতগুলোতে শুধুমাত্র সূরা
ফাতিহা পড়তেন।
জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url